Durga Puja 2022: ব্রিটিশরা দেশ ছাড়লেই সাদা পাঁঠা! ৯৪ বছরে পড়ল সেই পুজো
Birbhum: ১৯২৮ সালে গ্রামের বাসিন্দা ব্রজ মুর্মুর হাত ধরে পুজো শুরু হয়েছিল। আদিবাসী আচার মেনেই হয় পুজো।
নান্টু পাল, রামপুরহাট, বীরভূম: প্রায় একশো বছর আগের কথা। সেই সময়ে ব্রিটিশদের দখলে রয়েছে ভারত। অবিভক্ত ভারতের অবিভক্ত বাংলার বীরভূমের রামপুরহাট এলাকার একটি অখ্যাত গ্রাম। এখন যা বীরভূমের একেবারে ঝাড়খণ্ড সীমানার গা ঘেঁষে। সেখানেই অত বছর আগে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। আর সেই পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে ব্রিটিশদের অত্যাচারের ইতিহাস। লোক মুখে প্রচলিত ইতিহাসেও তেমনটাই বলা হয়।
জায়গাটি অধুনা ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) সীমানার গা ঘেঁষা বীরভূমের (Birbhum) রামপুরহাট (Rampurhat) ১ নম্বর ব্লকের সুলুঙ্গা গ্রাম। গোড়া থেকেই মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই এলাকা। উনিশশো তিরিশের দশকে যা ছিল মূলত চাষের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গ্রাম। বয়স্ক বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সুলুঙ্গা গ্রামে দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল ১৯২৮ সালে। সেই সময় গ্রামের বাসিন্দা ব্রজ মুর্মুর হাত ধরে পুজো শুরু হয়েছিল। আদিবাসী পদ্ধতিতে তাদের আচার মেনেই হয় যাবতীয় পুজোর নিয়ম। পুরোহিতও আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত। তার পর থেকে টানা পুজো হয়ে এসেছে।
কীভাবে শুরু পুজো:
কথিত রয়েছে, ব্রিটিশদের অত্যাচারেই এই পুজো শুরু। কীভাবে? গ্রামের বাসিন্দা হোপনা টুডু বলেন, একদিকে ব্রিটিশদের হাত ধরে সেখানে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার হতো। ওই এলাকার বহু বাসিন্দা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। যার ফলে ক্রমশ কমে আসছিল জনগোষ্ঠীর নিজস্ব আচার-আচরণ। তা দেখে নিজস্ব গোষ্ঠীকে আরও বেঁধে রাখার কৌশলের কথা ভাবতে থাকেন ব্রজ মুর্মু, দুর্গা মুর্মুরা। পাশাপাশি, বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশদের অত্যাচারও বাড়তে থাকে। চরম উদাসীনতাও ছিল একটি কারণ। স্থানীয়দের একটি অংশের দাবি, বাঁধ নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছিল সেই সময়। বৃষ্টি নির্ভর এই এলাকার পাশে রয়েছে একটি কাঁদর। ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া এলাকায় মানুষজন তাঁদের কথ্য ভাষায় পাহাড়ের গুহা বা বড় কোনও গর্তকে কাঁদর বলেন। সেখানে বাঁধের মতো গিয়ে জল ধরে রাখতে পারলে, চাষের কাজে সুবিধা হয়। বৃষ্টির জন্য নির্ভর করতে হয় না। ওই এলাকাতেও একটি কাঁদর রয়েছে, যা স্থানীয় নাম ভুটকা কাঁদর। সেখানে জল ধরে পরে চাষ করার ভাবনা ছিল। সেই কারণেই ভুটকা কাঁদরে একটি বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ব্রজ মুর্মু ও দুর্গা মুর্মু। এই মতো ১৯২৫ সালে বাঁধ নির্মাণের আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয় তৎকালীন সিউড়ি কালেক্টর অফিসে। কিন্তু বারবার আবেদনেও ইংরেজরা সাড়া দেয়নি। শেষ পর্যন্ত এক প্রকার গায়ের জোরেই নুড়ি-পাথর এবং চুন-সুরকি দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছিলেন তাঁরা। কথিত রয়েছে, সেই সময় মা দুর্গার কাছে শপথ নেওয়া হয়েছিল, ভারত থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে পারলে সাদা পাঁঠা বলি দেওয়া হবে। সেই থেকে শুরু হয় পুজো। তারপর থেকে এখনও অষ্টমীর দিন সাদা পাঁঠা বলি দেওয়া হয় এখানে। তবে কেউ কেউ মানত করলে বলির সংখ্যা বাড়ে।
সুলুঙ্গা গ্রামে ১১৮টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই আদিবাসী। তাঁদের মধ্যে অর্ধেক ঘর এখন খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী হয়েছে। এই পুজোর পুরোহিত আদিবাসী। আদিবাসী রীতি মেনেই এখানে পুজো হয়। কলা বউ স্নানের রীতি নেই। পাথর খাদানের পরিত্যক্ত জলাশয়ে ঘট ভরে প্রতিষ্ঠা করা হয় মণ্ডপে। এরপরেই শুরু হয় পুজো পাঠ। আদিবাসী ভাষায় মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পুজো হয়। আশেপাশের বেশ কয়েকটা গ্রামের মানুষ পুজো দেখতে আসেন সুলুঙ্গা গ্রামে। এক সময় অস্থায়ী মণ্ডপে পুজো হতো। বছর পাঁচেক আগে চাঁদা তুলে স্থায়ী মণ্ডপ গড়ে তোলেন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন: চা-শ্রমিকদের মহল্লায় এসজেডিএ চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েত ভোটের আগে খোঁজখবর কেন? প্রশ্ন বিরোধীদের