ABP Exclusive: 'এই ছবি নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা', একান্ত আলাপচারিতায় '১৭৭০'-এর 'সৃষ্টিকর্তা' রাম কমল মুখোপাধ্যায়
Ram Kamal Mukherjee Exclusive: প্রসঙ্গত, '১৭৭০' তৈরি হবে তেলুগু, তামিল ভাষায়। মালয়লম, কন্নড় ও বাংলায় ডাবিং হবে এই ছবির। কাকে দেখা যাবে মূল চরিত্রে সেই বিষয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন নির্মাতারা।
কলকাতা: ঘোষণা হয়েছিল আগেই। কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে ছবির মোশন পোস্টারও (Motion Poster)। রাম কমল মুখোপাধ্যায়ের (Ram Kamal Mukherjee) সৃজনে, অশ্বিন গঙ্গরাজুর (Ashwin Gangaraju) পরিচালনায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী সৃষ্টি 'আনন্দমঠ' (Anandamath) দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হচ্ছে '১৭৭০' (1770 the movie)। কোন প্রেক্ষাপটে, কী ভাবনা থেকে এই ছবি তৈরির কথা প্রথম মাথায় এল বঙ্গসন্তান রাম কমলের? এবিপি লাইভের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় জানালেন অনেক তথ্য।
এবিপি লাইভ: 'আনন্দমঠ' নিয়ে ছবি তৈরির কথা মাথায় এল কীভাবে?
রাম কমল মুখোপাধ্যায়: 'আনন্দমঠ' এমন একটা বিষয় যা মাতৃবন্দনার কথা বলে, দেশভক্তির কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে। 'বন্দে মাতরম' স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মূল মন্ত্র বলাই যায়। বঙ্কিমবাবুর 'আনন্দমঠ'-এর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রামের যে বীজ রোপন করা হয়েছিল, আমার মনে হয় না তা কোনওভাবে কোনও ছবিতে বা কোনও ওয়েব সিরিজে আজ পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে বলে।
বলা হয় ১৮৫৭-এ সিপাহী বিদ্রোহ দিয়েই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু। কিন্তু তারও আগে 'আনন্দমঠ'-এ ১৭৭০ সালের সন্ন্যাসী বিদ্রোহের উল্লেখ আছে। যার কিছুটা হয়তো কিছুটা হয়তো কাল্পনিক, লোকমুখে প্রচলিত। কিন্তু সেই সময়ে রচিত 'বন্দে মাতরম' অর্থাৎ আমার দেশ আমার মা, এটা প্রথম ভারতেই বলা হয়। এবং তখন সেই কথাটা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মেনে নিয়েছিল। সেই কারণেও ইংরেজদের সমস্যা হয়েছিল। মাত্র দুটো শব্দে গোটা দেশকে একত্রিত করা হয়েছিল। সেই থেকেই সিনেমার কনসেপ্ট মাথায় আসে। অবশ্যই আধুনিক যুগের দর্শকের পছন্দ, বোধ মাথায় রেখে এখনের মতো করে তৈরি করা হবে এই ছবি। তবে 'আনন্দমঠ'-এর যে আত্মা সেটা সম্পূর্ণ বজায় থাকবে। সেই কারণে খুব সচেতনভাবে পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে 'অনুপ্রাণিত', 'অবলম্বনে' নয় কিন্তু।
প্রশ্ন: এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য বাকিদের রাজি করানো কি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
রাম কমল: রাজির করানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই তো বিজয়েন্দ্র প্রসাদ। এত সিনিয়র একজন মানুষ। উনি জিজ্ঞেস করেন যে 'আনন্দমঠ' নিয়ে কেন কাজ করতে চাইছি। অন্য কিছু নয় কেন? তখন আমার এই গল্প নিয়ে পুরো পরিকল্পনাটা বলি ওঁকে। সেটা চিত্রনাট্যের অংশ তাই বলতে পারছি না এখনই। সেটা শুনে উনিও আগ্রহী হন।
প্রশ্ন: পরিচালনায় অশ্বিন গঙ্গরাজু। তাঁর হাতে এই কাজটা তুলে দেওয়ার কারণ কী?
রাম কমল: প্রথমত অশ্বিন এরকম ধরনের ছবির কাজ করেছে, যেমন বাহুবলী ১ ও ২। ওই ঘরানার ছবির সঙ্গে ভীষণভাবে ও পরিচিত। এছাড়া আমরা এমন একজনের সন্ধানে ছিলাম যে তাঁর নিজের ইগোর বোঝা নিয়ে আসবে না। এমন কেউ যে একজন সহকর্মীর মতো আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। অশ্বিনের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার পরই ওঁর ওই 'ডাউন টু আর্থ' স্বভাবই আমাকে মুগ্ধ করে। তাছাড়া অশ্বিন এর আগে এস এস রাজামৌলির সঙ্গে কাজ করেছে। যাঁর স্বভাব, চরিত্র এতটাই নম্র, ভদ্র যে দেখে মনেই হবে না উনি একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবি বানান। ফলে সেই প্রভাবও খানিক অশ্বিনের মধ্যে আছে। সর্বোপরি অশ্বিনের বয়স খুবই কম। আমি টিমে কম বয়সীদেরই চাইছিলাম। ওঁর প্রজন্ম কীভাবে কোনও ছবি দেখতে চাইবে সেটা ও বেশি ভাল বুঝবে। '১৭৭০' ছবির সৃজনে আমি, পরিচালনায় অশ্বিন। ফলে বলা যেতে পারে আমরা ছবিটার বাবা ও মা।
প্রশ্ন: 'আনন্দমঠ'-এর সঙ্গে বাঙালির একটা আত্মিক যোগ আছে। এত বড় ক্যানভাসের একটি ছবি তৈরির কথা ভাবার সঙ্গে এটা মনে হয়নি যে একটুও যদি কোথাও কোনও ভুল হয়, তাহলে দর্শক ক্ষেপে উঠতে পারে?
রাম কমল: (খানিক হেসে) এটা তো সব সময়েই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। কিন্তু সেটা ভেবে বসে থাকলে তো কোনওদিনই কোনও কাজ করা যাবে না। নতুন কিছু চেষ্টাও করা যাবে না তাহলে। এমনকী 'দেবদাস' মুক্তির পর সঞ্জয় লীলা বনশালীকেও প্রচুর সমালোচিত হতে হয়েছিল। যদিও বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে। কিন্তু প্রায় ওই একই সময়ে শক্তি সামন্তের পরিচালনায় বুম্বা দাকে নিয়ে 'দেবদাস' মুক্তি পায়। একেবারে শরৎবাবুর লেখা পুঙ্খানুপুঙ্খ রেখে তৈরি। কিন্তু সেটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের মনও, তাঁদের চাহিদাও বুঝতে হবে। সবশেষে তাঁরা তো টিকিট কেটে সিনেমাটা দেখবে। তাহলে যেটা বইতে পড়েছেন বা ইউটিউবে সাদা-কালো ছবিতে দেখে ফেলেছেন সেটা কেন আমি এতদিন পর দেখাব? শেষে এটাই বলার, ট্রোলাররা সত্যিই ম্যাটার করে না।
প্রশ্ন: ছবির নাম ঘোষণা হয়ে গেছে, পোস্টার মুক্তি পেয়ে গেছে। এখন আপনার অনুভূতি ঠিক কেমন?
রাম কমল: পোস্টারটা দুর্দান্ত রেসপন্স পেয়েছে। আমি এখন সত্যিই খানিকটা রিল্যাক্সড। পুরো কৃতিত্বই একতার। সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ওঁরা অবশ্যই চেয়েছিলেন দক্ষিণের কোনও শিল্পী বা মুম্বইয়ের কেউ এই পোস্টারটা তৈরি করুক। কিন্তু আমিই জেদ ধরেছিলাম যে একতাকে একটা সুযোগ দিতেই হবে। আমার প্রায় সব ছবিতেই ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি। একতার মনে ভয় ছিল। প্রায়ই বলত, 'আমি শেষ পর্যন্ত থাকব তো এই কাজটায়?' অবশেষে ওঁর কাজ সকলেরই খুব পছন্দ হয়। মোশন পোস্টারে তিন রকমভাবে 'বন্দে মাতরম' কথাটা রাখা অশ্বিনের আইডিয়া ছিল।
প্রশ্ন: বাংলা উপন্যাস। ছবির টিমেও একাধিক বাঙালির উপস্থিতি রয়েছে। তাহলে কি প্রধান চরিত্রে কোনও বাঙালিকেই দেখতে পাওয়া যাবে?
রাম কমল: প্রথমত চিত্রনাট্য ফাইনাল লক হলে অভিনেতার নাম ঠিক করা হবে। আসলে ছবিটা যে আড়ম্বরে তৈরি হচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে আমার আক্ষরিক অর্থেই আমার কোনও তারকা অভিনেতাকে প্রয়োজন। যাঁর গোটা দেশে একটা বিশাল ফলোইং আছে। আমি চাই বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করতে। মূল চরিত্রে, কথা দিতে পারছি না। তবে চিত্রনাট্য ফাইনাল হলে যদি কোনও চরিত্রে মানানসই কাউকে পাই তাহলে তো অবশ্যই তাঁকে নেওয়া হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনার এই ছবি মুক্তির পরও তো কেউ 'তারকা' হয়ে উঠতেপারেন!
রাম কমল: দেখুন, আজ যদি আমার নাম কর্ণ জোহর বা সঞ্জয় লীলা বনশালী হত, তাহলে 'নন স্টার'কে নিয়ে তৈরি ছবিও দর্শক দেখতে আসতেন। কিন্তু এই ছবিটা করা, আমার নিজের জন্যই বড় একটা সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ। ফলে আমাকে নিজেকে আগে প্রমাণ করতে হবে। '১৭৭০' সেই জায়গা আমার। হতে পারে এরপরে কোনও বড় ছবি করলাম, সেখানে আমি বলতে পারি যে আমি নতুন অভিনেতাকে নিয়েই কাজ করব। ফলে সেই স্থানটা পেতে আমার নিজেকে প্রমাণ করা জরুরী।
আরও পড়ুন: 'Dostojee': শৈশবে ফিরে যাওয়া 'দোস্তজী'র হাত ধরে, সফর পরিচালনায় প্রসূন চট্টোপাধ্যায়
প্রসঙ্গত, '১৭৭০' তৈরি হবে তেলুগু, তামিল ভাষায়। মালয়লম, কন্নড় ও বাংলায় ডাবিং হবে এই ছবির। কাকে দেখা যাবে মূল চরিত্রে সেই বিষয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন নির্মাতারা। অপেক্ষা এখন পরবর্তী ঘোষণার।