Tollywood-Bollywood: কেবল 'বহুরূপী' নয়, টলিউড-বলিউড বারে বারে ফিরে গিয়েছে সত্য ঘটনা নির্ভর গল্পতেই
True Incident Based Story:
কলকাতা: জঙ্গিদের বন্দুকের নিশানায় ১৭৬ জন বিমানযাত্রী। সাতদিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াই। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিদেশের মাটি থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনা। পাকিস্তানের অতর্কিত হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয় এয়ারস্ট্রিপ সারিয়ে শিরোনামে গ্রামের ৩০০ মহিলা। চিত্রনাট্যের চেয়েও রোমাঞ্চকর সত্য ঘটনা দাগ কেটে গিয়েছে দর্শকমনে। গল্প গলেও সত্যি। তপন সিংহের সেই বিখ্যাত ছবিটির কাহিনি আদপেই সত্য ঘটনা অনুপ্রাণিত কি না, তা বলা মুশকিল। তবে সিনেমা থেকে সিরিজের নানা কাহিনিতে সত্য ঘটনার ভরপুর প্রভাব যে রয়েছে, তা নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। বায়োপিকের কথা বাদ দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটি থেকে বিগ স্ক্রিনে 'রিয়েল স্টোরি'-র রমরমা চোখে পড়ছে।
আইসি এইট ওয়ান ফোর: দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক
২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৯। কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস আইসি এইট ওয়ান ফোর। ১ ঘন্টা ৫৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করার আগেই সন্ত্রাসবাদীদের হাতে অপহৃত হয়ে অমৃতসর, লাহৌর, দুবাইয়ের মাটি ছুঁয়ে বিমানটি পৌঁছয় কান্দাহারে। ১৭৬ জন যাত্রী সহ বিমানটি সাতদিন জঙ্গিদের হেফাজতে থাকে। জইশ-ই-মহম্মদের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী মাসুদ আজহার সহ আরও তিন জঙ্গিকে ফেরত দিয়ে যাত্রীদের মুক্ত করে ভারত। সেই কুখ্যাত কান্দাহার বিমান অপহরণের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছরই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ আইসি এইটএয়ানফোর। নাসিরুদ্দিন শাহ, বিজয় বর্মা, পঙ্কজ কপূর, দিয়া মির্জা, অরবিন্দ স্বামী, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, কুমুদ মিশ্র, পত্রলেখা অভিনীত সিরিজটি পরিচালনা করেছেন অনুভব সিনহা।
অতীত অপরাধের কাহিনি 'বহুরূপী'
১১ বছর আগে মুক্তধারা ছবিটি করার সময়ই অন্য একটি ছবির আইডিয়া এসেছিল নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মাথায়। সেই কাহিনিটি এবছর পুজোয় বড় পর্দায় দর্শকদের সামনে হাজির করেছেন তাঁরা। সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে বহুরূপী-র চিত্রনাট্য। সময়কাল ১৯৯৮ থেকে ২০০৫। পশ্চিমবঙ্গের বুকে ঘটে যাওয়া একটি অবিশ্বাস্য অপরাধমূলক ঘটনার প্রেক্ষাপটে, লালবাজারের তদন্তের দলিলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে কাহিনিটি। যাঁরা এই কাহিনির সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা এখনও জীবিত রয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দি নিয়েই হাত দেওয়া হয়েছিল চিত্রনাট্যের কাজে। বহুরূপীতে বিক্রম প্রামাণিকের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ১০ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। রক্তবীজে খাগড়াগঢ় কাণ্ডের তদন্তের পর পুলিশের উর্দিতে আবির চট্টোপাধ্যায় আবার হাজির হন বহুরূপীতে, এসআই সুমন্ত ঘোষালের ভূমিকায়। তবে বহুরূপীতে অন্যতম প্রাপ্তি ছিল ঝিমলির চরিত্রে কৌশানি আর খুড়োর চরিত্রে প্রদীপ ভট্টাচার্যর অভিনয়।
সত্যকাহিনিতে নওয়াজউদ্দিন
সত্যঘটনার প্রেক্ষাপটে আগামী একটি ছবিতে অভিনয় করতে চলেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। অসমের ধুবড়ির প্রাক্তন জেলা ও দায়রা বিচারক উপেন্দ্রনাথ রাজখোয়ার চরিত্রে দেখা যাবে নওয়াজকে। সাতের দশকে অসম কেঁপে উঠেছিল উপেন্দ্রনাথ রাজখোয়ার ঘটনায়। সূত্রের খবর, ধুবড়ির বাংলো থেকে হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গিয়েছিলেন উপেন্দ্রনাথ। তাঁর খোঁজে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ সেই বাংলো থেকে উপেন্দ্রনাথের স্ত্রী এবং তিন কন্যা সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নৃশংস ভাবে স্ত্রী-কন্যাদের খুন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন উপেন্দ্র। শিলিগুড়ির সেবকের একটি হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারির আগে সে আত্মহত্যার বিফল চেষ্টাও করেছিল। বাড়ির রাঁধুনির সাহায্য নিয়ে স্ত্রী-কন্যাদের হত্যা করে বাংলোর জমিতে পুঁতে দিয়েছিলেন উপেন্দ্র। এই মামলায় গুয়াহাটি হাইকোর্ট ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল উপেন্দ্র বিরুদ্ধে। এই বহু বিতর্কিত, হাড়হিম করে দেওয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষাপটে নওয়াজউদ্দিনকে নিয়ে ছবিটি প্রযোজনা করবেন নওয়াজের ভাই ফৈজুদ্দিন সিদ্দিকি। বলিউড সূত্রে খবর, এই ছবিটি ছাড়াও আগামীতে আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করতে চলেছেন নওয়াজ, যেগুলির চিত্রনাট্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে অয়েল কুমার। আটের দশকে বেঙ্গালুরুর অপরাধ জগতের একছত্র অধিপতি বেনাকানাহাল্লি আলাপ্পা শিবকুমারকে সবাই অয়েল কুমার নামেই চিনতেন। অপরাধীচক্রের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বেঙ্গালুরুর জ্বালানি তেল ব্যবসা, শ্রমিক ইউনিয়ন, অবৈধ অর্থ পাচার থেকে শুরু করে ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন, সবই অয়েল কুমারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৯০-এর ২০ নভেম্বর খুন করা হয় অয়েল কুমারকে।
গ্যাসের বিষ বাতাসে
ভারতে সত্যঘটনা অবলম্বনে যে সিনেমা এবং সিরিজগুলি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে বিশেষ ভাবে নজর কড়েছে যশরাজ ফিল্মস এবং নেটফ্লিক্সের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি চার এপিসোডের সিরিজ দ্য রেলওয়ে মেন। ভোপালের মর্মান্তিক গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি উস্কে দিয়েছিল সিরিজটি। ভুক্তভোগীদের শরীরে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির সেই ক্ষত আজও দগদগে। সালটা ছিল ১৯৮৪। ২ ডিসেম্বর রাত থেকে মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট শহর ভোপালের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের নাকে ঢুকছিল ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের কারখানা থেকে লিক হওয়া বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস। রাতারাতি মৃত্যু হয়েছিল সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের। পরে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছিল। বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে চিরজীবনের জন্য গুরুতর অসুস্থতার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন ভারতীয় রেলের কিছু কর্মী। তাঁদের সিদ্ধান্তে এবং বিচক্ষনতায় প্রাণ বেঁচেছিল বহু ভোপালবাসীর। দ্য রেলওয়ে মেন মুক্তির পর সোশাল মিডিয়ায় বহু ভোপালবাসী নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। আর মাধবন, কে কে মেনন, দিব্যেন্দু শর্মা, বাবিল খান, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, জুহি চাওলা অভিনীত সিরিজটি পরিচালনা করেছিলেন শিব রাওয়াইল।
মৃত্যুর মরুভূমি পেরিয়ে জীবনের জয়
এবছর মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলির মধ্যে অন্যতম প্রশংসিত ছবি দ্য গোট লাইফ। মৃত্যুকে হারিয়ে জীবনের জয়ের এক অবিশ্বাস্য কাহিনি দ্য গোট লাইফ। কোনও কাল্পনিক ঘটনা নয়। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার কাহিনিই পৃথ্বীরাজ সুকুমারণ অভিনীত ছবিটির প্রধান রসদ। মূল কাহিনি জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৯৩ সালে। কেরলের হরিপদের আরাত্তুপুজা গ্রামের বাসিন্দা নাজীব, কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে। মুম্বইয়ে এক এজেন্টের সূত্রে সৌদি আরবের একটি সুপারমার্কেটে কাজ পেয়েছিলেন তিনি। তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কাজের পাশাপাশি বাসস্থানও পাবেন তিনি। কিন্তু সেই প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়ার পরই বদলে যায় তাঁর জীবন। মরুভূমির মাঝে একটি পশুখামারে জোর করে আটকে রেখে তাঁকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রায় দু'বছর সেই পশু খামারে আটক থাকার পর একদিন পালানোর সুযোগ পান নাজীব। পায়ে হেঁটে মরুভূমি পেরিয়ে দেশে ফেরার পরও নাজীবের মনে হত তিনি যেন স্বপ্ন দেখছেন। নাজীবের এই কাহিনি নিয়েই বেনিয়ামিনের লেখা মালয়ালম উপন্যাস আদুজীবিতম-এর ছায়ায় ব্লেসি পরিচালিত সারভাইভাল ড্রামা দ্য গোট লাইফের চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল। পৃথ্বীরাজ সুকুমারণ নিজে গিয়ে দেখাও করেছিলেন বাস্তবের নাজীবের সঙ্গে।
খনি থেকে ৬৫ শ্রমিককে উদ্ধার
অক্ষয় কুমারের ফিল্মোগ্রাফিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবি রয়েছে। মিশন রানিগঞ্জ, এয়ারলিফট এবং সরফিরা। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এয়ার সিভিলিয়ান ইভ্যাকুয়েশন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। কুয়েত এবং ইরাকের যুদ্ধের পটভূমিতে কুয়েত থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ভারতীয়কে নিরাপদে এয়ারলিফট করিয়ে ভারতে ফিরিয়ে আনার সেই ঐতিহাসিক ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন কুয়েত নিবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী ম্যাথুনি ম্যাথিয়াস। উপসাগরীয় যুদ্ধের আবহে ১৯৯০ এর ১৩ অগাস্ট থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে চাপিয়ে কুয়েত থেকে এই বিপুল সংখ্যক ভারতীয়কে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তাঁর ছায়াতেই অক্ষয় কুমার অভিনীত ছবি এয়ারলিফট-এ রঞ্জিত কাটিয়ালের চরিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৮৯ সালের ১১ নভেম্বর। গভীর রাতেও কয়লা তোলার কাজ করছিলেন রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারির কয়লা শ্রমিকরা। হঠাৎ খনিগর্ভের দেওয়াল ভেঙে জল ঢুকে পড়ায় খনির মধ্যেই আটকে পড়েন ৭১ জন। তাঁদের মধ্যে ৬ জনের জলে ডুবে মৃত্যু হয়। খনিকে আটকে থাকা শ্রমিকদের বাঁচাতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার জসবন্ত গিল যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন, তা আগে কোনও মাইনিং রেসকিউ অপারেশনে ব্যবহার করা হয়নি। খনির উপরে বোরহেল করে তার মধ্যে দিয়ে একটি লোহার তৈরি ক্যাপসুল খনির মধ্যে নামিয়ে দেন তিনি। সেই ক্যাপসুলে চড়ে জসবন্ত গিল নিজেই নীচে নামেন। দুর্ঘটনার প্রায় ৮০ ঘন্টা পর ৬৫ জন শ্রমিক সুরক্ষিত ভাবেই খনির বাইরে বেরিয়ে আসেন। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটেই অক্ষয় কুমারের মিশন রানিগঞ্জ ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল। জসবন্ত গিলের ভূমিকায় অক্ষয় অভিনয় করেছিলেন।
মধ্যবিত্তের উড়ানের স্বপ্ন
প্রাক্তন ভারতীয় সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন জি আর গোপীনাথ ভারতে মধ্যবিত্তদের স্বল্পমূল্যে উড়ানের আস্বাদ দিতেই ২০০৩ সালে এয়ার ডেকানের গোড়াপত্তন করেছিলেন। নিজের স্বপ্ন পূরণে তাঁকে প্রচুর প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। সরফিরায় অক্ষয় কুমার অভিনীত বীর মাত্রের চরিত্রটি ক্যাপ্টেন গোপীনাথের ছায়াতেই লেখা হয়েছে। এবছরই মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি বক্স অফিসে একেবারেই সাফল্য পায়নি।
নারীবাহিনীর দক্ষতায় সচল এয়ারবেস
সাল ১৯৭১। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে। সেই সময় ভারতের ভূজ এয়ারবেসের দায়িত্বে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার বিজয় শ্রীনিবাস কার্নিক। পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ভূজ এয়ারবেসের উপরে অনেকটা পার্ল হারবারের কায়দাতেই আক্রমণ চালিয়েছিল। সূত্রের খবর, ১৪ দিনের মধ্যে ৯২টি নাপাম বোমা এবং ২২টি পাকিস্তানি রকেট আছড়ে পড়েছিল ভূজে। হার না মেনে তিনদিনের মধ্যে স্থানীয় একটি গ্রামের ৩০০ মহিলার সাহায্যে এয়ারস্ট্রিপ মেরামত করে ফেলেন বিজয় কার্নিক। সচল হয় ভূজ এয়ারবেস। পাকিস্তানি বোমারু বিমানের আক্রমণ অগ্রাহ্য করে দেশের সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যে অকুতোভয় মহিলারা, তাঁদের কাহিনি উঠে এসেছে অজয় দেবগন, সোনাক্ষী সিনহা, সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ভূজ দ্য প্রাইড অফ ইন্ডিয়ায়।
সন্তানদের জন্য মায়ের লড়াই
মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে। এক বাঙালি মায়ের আপোসহীন লড়াইয়ের কাহিনি। না, কাহিনি নয়। সত্য ঘটনা। ২০১২ সালে নরওয়েবাসী অনুরূপ ভট্টাচার্য এবং সাগরিকা চক্রবর্তীর দুই সন্তানকে পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। নরওয়ের আইন অনুযায়ী বিধিভঙ্গ করে হাত দিয়ে সন্তানদের খাওয়ানো এবং তাদের সঙ্গে একই বিছানায় শোয়ার অভিযোগে অনুরূপ-সাগরিকার কাছ থেকে তাঁদের দু’ই সন্তানকে আলাদা করে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়৷ জানিয়ে দেওয়া হয় দু’ই সন্তানের আঠারো বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সন্তানদের সঙ্গে বছরে মাত্র দু’বার একঘণ্টা করে দেখা করতে পারবেন৷অবশেষে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান সূত্র বের হয়। সন্তানের জন্য এক মায়ের ল়ড়াইয়ের সত্য কাহিনির ছায়াতেই তৈরি হয়েছে রানি মুখোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত ছবি মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে।
১৩ বছর বয়সে পূর্ণার এভারেস্ট জয়
তেলেঙ্গানার অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারের মেয়ে পূর্ণা মালাবাথ স্বপ্নকে অতিক্রম করে পা রেখেছিল মাউন্ট এভারেস্টে। তখন তার বয়স মাত্র ১৩। যে মৃত্যুপথে পা রাখার কথা ভাবলে তাবড় পর্বতারোহীর বুঁকেও কাঁপন ধরে, বিপজ্জনক সেই পথ অসমসাহসে পেরিয়ে গিয়ে পৃথিবীর কনিষ্ঠতম এভারেস্টজয়ীর শিরোপা জিতে নিয়েছিল পূর্ণা। আর পূর্ণার এই অবিশ্বাস্য কীর্তিই সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছেন রাহুল বসু। ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল রাহুল বসু পরিচালিত ছবি পূর্ণা - কারেজ হ্যাজ নো লিমিট। পূর্ণার এভারেস্ট জয়ের কাহিনির শ্যুটিং রাহুল শুরু করেছিলেন তেলেঙ্গানার পাকালা গ্রামে, ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায়। আর ছবির শ্যুটিং শেষ হয়েছিল হিমালয়ের কোলে। এরপর শ্যুটিং হয় ভুঙ্গীর রক-এ। উচ্চতায় ৬০০ ফুট। সেখানে শ্যুটিং করা একজন চিত্রপরিচালকের কাছে স্বপ্ন। আর বাস্তবে সেই স্বপ্ন পূরণ করা, অত্যন্ত কঠিন। ভুঙ্গীর শ্যুটিং পর্ব শেষ করে টিম পূর্ণা পাড়ি দেয় হিমালয়ের পথে। প্রথম গন্তব্য, দার্জিলিং। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে পর্বতারোহনের প্রশিক্ষণ নেন পূর্ণার চরিত্রাভিনেত্রী অদিতি ইনামদার। বাস্তবে পূর্ণাও সেখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। শেষ পর্বের শ্যুটিং হয়েছিল সিকিমের লাচুং-এ। মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় শ্যুটিং করাই ছিল একটা চ্যালেঞ্জ।
ওটিটিতে আর্থিক তছরুপের কাহিনি
হনসল মেহতা ভারতের একাধিক আর্থিক তছরুপের ঘটনা নিয়ে ওয়েব সিরিজ বানিয়েছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আবার এক স্ক্যাম কাহিনি আসছে চলেছে সোনি লিভে। তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই, 'সাহারা - দ্য আনটোল্ড স্টোরি' অবলম্বনে হনসল মেহতার আগামী সিরিজ 'স্ক্যাম টু থাউজেন্ট টেন - দ্য সুব্রত রয় স্টোরি' -র কাহিনি লেখা হয়েছে। হনসল মেহতা স্ক্যাম সিরিজে এর আগে দুটি হিট দিয়েছেন। ২০২০ সালে মুক্তি পেয়েছিল 'স্ক্যাম নাইন্টিন নাইন্টি টু-দ্য হর্ষদ মেহতা স্টোরি।' সেই সিরিজটিতে অভিনয় করেই লাইম লাইটে এসেছিলেন প্রতীক গান্ধী। এরপর ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায় স্ক্যাম টু থাউজ্যান্ট থ্রি -দ্য তেলগি স্টোরি।' আব্দুল করিম তেলগির ৩০ হাজার কোটি টাকার স্ট্যাম্প পেপার কেলেঙ্কারির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছিল সিরিজটিতে। তেলগির চরিত্রে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন গগন দেব রাইয়ার।
ওয়েব সিরিজে হাড়হিম করা বুরারিকাণ্ড
২০১৮-র জুলাই মাস। দিল্লির বুরারি এলাকার ২৪ সন্ত নগরের দোতলা একটি বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেছিলেন এক প্রতিবেশী, তা শুধু তাঁরই নয়, হাড়হিম করে দিয়েছিল গোটা দেশবাসীর। সিলিং থেকে ঝুলছিল একই পরিবারের ১০ জনের দেহ। একটি দেহ পড়েছিল ঘরের মেঝেতে। স্বচ্ছল, হাসিখুশি একটি পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক পরিণতি। এক রাতের মধ্যে শেষ সবাই!!!! চিরতরে!! ভয়াবহ বুরাবি কাণ্ডের তদন্তে নেমে আত্মীয় ও পরিচিত মিলিয়ে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। রহস্যের জট খুলতে দিল্লি পুলিশের তরফে মানসিক ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। আত্মীয়-পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে মৃত ১১ জনের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তা যাচাই করেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। পুলিশের দাবি ছিল, ঘটনার পাঁচদিন আগেই আত্মহত্যার জন্য শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে হাইপ্রোফাইল এই ঘটনার তথ্যতালাশ শুরু করেন গোয়েন্দারা! আস্তে আস্তে বিষয়টি স্পষ্ট হতে শুরু করে! প্রাথমিক তদন্তেই উঠে আসে, ভাটিয়া পরিবার তন্ত্রসাধনার জালে ফেঁসে গিয়েছিল!!! যার চরম পরিণতি,
১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু! সেই ঘটনার ছায়াতেই একাধিক ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়েছে। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে লিনা যাদব এবং অনুভব চোপড়ার তৈরি ডকুমেন্টরি সিরিজ হাউস অফ সিক্রেটস - দ্য বুরারি ডেথস।ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পেয়েছে বুরারি কণ্ডের ছায়াতে তৈরি সিরিজ আখরি সচ। তমান্না ভাটিয়া, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল বাগ্গা, শিবিন নারাঙ্গ অভিনীত সিরিজটি পরিচালনা করেন রব্বি গ্রেওয়াল। ইনসাইড এজ সিজন ওয়ান ও টু, স্ক্যাম নাইন্টিন নাইন্টিটু- দ্য হর্ষদ মেহতা স্টোরি, সাস, বহু অউর ফ্লেমিঙ্গো-র মত সিরিজগুলির অন্যতম লেখক সৌরভ দে আখরি সচ-এর কাহিনি লিখেছিলেন বুরারি কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে জিও সিনেমায় মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ গন্থ চ্যাপ্টার ওয়ান। সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন মানব ভিজ, মনিকা পানওয়ার, রাজেশ তৈলাঙ্গ, সালোনি বাত্রা। পরিচালনা করেছেন কনিষ্ক বর্মা।
২৫ এপ্রিল 'রণনীতি - বালাকোট অ্যান্ড বিয়ন্ড'
বালাকোট এয়ার স্টাইকের প্রেক্ষাপটেও তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ। জিও সিনেমায় মুক্তি পেয়েছে লারা দত্ত, জিমি শেরগিল, আশুতোষ রাণা, আশিস বিদ্যার্থী, সত্যজিৎ দুবে অভিনীত 'রণনীতি - বালাকোট অ্যান্ড বিয়ন্ড।' সিরিজটি পরিচালনা করেছেন সন্তোষ সিং।
সিনেমা-সিরিজ শুধু কল্পনারই ফসল নয়, সত্য ঘটনার আয়নাও হয়ে ওঠে বার বার।
আরও পড়ুন: Rupam Islam: অন্যরকম ক্রিসমাস ইভ! পথশিশুদের হাতে উপহারের ঝুলি তুলে দিলেন রূপম ইসলাম