Tejas Film Review: দুর্বল চিত্রনাট্য, কঙ্গনার অভিনয়ও প্রশ্নের মুখে পড়ল 'তেজস'-এ
Kangana Ranaut: এই ছবিটা কঙ্গনার ছবি ও অভিনয়ের মানকে অনেকটা নীচে নামিয়ে দিল। অভিনয়ের জোরে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন কঙ্গনা। কিন্তু এবার তাঁকে দেখতে হবে, যে তিনি কী ছবি করছেন, তার গল্প কেমন।
সর্বেষ মেওয়ারা
কঙ্গনা রানাউত, অংশুল চৌহান, বরুণ মিত্র, আশীষ বিদ্যার্থী
মুম্বই: সদ্য মুক্তি পেয়েছে কঙ্গনা রানাউত (Kangana Ranaut)-এর নতুন ছবি 'তেজস' (Tejas)। এই ছবির গল্প মূলত এয়ারফোর্সের এক বিমান চালককে নিয়ে, যে তার দেশকে রক্ষা করার জন্য যে কোনও পর্যায়ে যেতে পারে। তবে, ছবির বিষয়বস্তু জমজমাট হলেও, গল্প বলার ফাঁক এই ছবিটাকে চূড়ান্ত বিরক্তিকর ও হতাশাব্যঞ্জক করে তুলেছে। তবে ছবির দৈর্ঘ্য কম হওয়াটাই একমাত্র ভাল দিক ছবিটার একমাত্র ভাল দিক।
ছবির গল্প
এই ছবির গল্প তেজস গিল নামের এক পাইলটকে নিয়ে। পর্দায় এই চরিত্রে দেখা যাবে কঙ্গনা রানাউতকে। যুদ্ধবিমান চালানো শেখার সময় থেকেই, ভীষণ উজ্জ্বল ছাত্রী ছিলেন তেজস। ট্রেনিং শেষ হওয়ার আগেই যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়াবার শখ ছিল তাঁর। লুকিয়ে সেই শখ-পূর্ণ করতে গিয়ে নিয়ম ভাঙে তেজস। অন্য কোনও অফিসার হলে তাকে হয়তো বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হত.. তবে তেজসকে পাঠানো হয়, অন্য একটি মিশনে।
এই ছবিতে তুলে ধরা হয়, ভারতীয় বিমানবাহিনীতে তেজসের সুযোগ পাওয়া ও তার উত্থানের গল্প নিয়ে। বিভিন্ন নিয়ম, নিয়ম-ভাঙা সমস্ত কিছুকেই তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। তবে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়েছে তেজসের আগের জীবনও। এক সঙ্গীতশিল্পীর প্রেমে পড়া, তার সঙ্গে জীবন শুরু করার স্বপ্ন এবং ২৬/১১-র হামলায় স্বপ্ন হারিয়ে ফেলা, সবই তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। সেই ঘটনা থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তেজসের। যে সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে।
এরপরে, তেজসকে এমন একটি মিশনে নিয়োজিত করা হয়, যাতে সে নিজেও ব্যক্তিগতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তেজসের এক বন্ধু গুপ্তচর হিসেবে বিদেশে গিয়ে আটকে পড়ে, তাকে ফিরিয়ে আনার ডাক পরে তেজসের। সমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে সেই বন্ধুকে ফিরিয়ে আনে তেজস।
কেমন হল তেজস?
প্রথম থেকেই ছন্দে ছিল না এই ছবি। কঙ্গনার অভিনয় কিন্তু বলিউডে এমনকি বিভিন্ন অনুরাগীদের মধ্যেও বেশ প্রংশসিত। এই ছবিতে কঙ্গনাকে দেখা যাবে এক যুদ্ধবিমানের চালিকা হিসেবে। যদি কঙ্গনার মতো অভিনেত্রী ইউনিফর্ম পরে, তাহলে যে তা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ বেশি থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে তা একেবারেই হয়নি। গোটার ছবির মধ্যে এমন কোনও দৃশ্য নেই, যা মর্মস্পর্শী। সিঙ্গল স্ক্রিনে দেখার ছবি এটি নয়। সেইসঙ্গে ছবির গ্রাফিক্সের কাজও অত্যন্ত বাজে। বেশি কিছু জায়গায় মনে হয়, ভিডিও গেম দেখছি। ছবি দেখার পরে আপনার মনে হতেই পারে, ছবিটা বানানোর পরে, নির্মাতারা কি নিজে সেটা দেখেছিলেন? ছবিতে রাম মন্দির দেখানো হয়েছে। তবে স্বয়ং শ্রী রামও ওই ছবিকে বাঁচাতে পারবে না। ছবিটা তৈরি করার কী অর্থ, সেটাই দেখার পরে বোঝা যায় না। ভারতীয় এয়ারফোর্স আরও দুর্দান্ত একটা ছবির যোগ্য।
অভিনয়
কঙ্গনার অভিনয়ের বেশ প্রশংসা রয়েছে দেশ জোড়া। তবে ওই যে, সচিন তেন্ডুলকর বা বিরাট কোহলিকেও কখনও কখনও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। কঙ্গনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে এই ছবিতে। কঙ্গনা যে ভাল অভিনেত্রী তা সবাই জানেন, তবে এই ছবিতে কঙ্গনার অভিনয় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ইনস্টাগ্রামে তাঁকে দেখে অনুরাগীরা উদ্দীপ্ত হলেও, ছবি দেখতে গিয়ে রীতিমতো হতাশ হবেন। ইউনিফর্মে তাঁকে দেখতে দুর্দান্ত লাগছে বটে, তবে অভিনয়ে তিনি দর্শকদের মনে দাগ কাটতে পারেননি। ছবিতে অংশুল চৌহান (Anshul Chauhan)-এর অভিনয় নজর কেড়েছে। তিনিই একমাত্র দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন এখানে। বরুণ মিত্র ও আশীষ বিদ্যার্থীর অভিনয়ও সন্তোষজনক। কিন্তু ছবির চিত্রনাট্য এতটাই খারাপ যে অভিনেতা অভিনেত্রীদের তেমন কিছু করার ছিল না।
পরিচালনা
পরিচালক সর্বেষ মেওয়ারা (Sarvesh Mewara)-র চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনা গড়পড়তা। তবে কঙ্গনার মতো ভাল অভিনেত্রীকেও তিনি ব্যবহার করতে পারেননি। ছবিতে তিনি এমন কোনও দৃশ্য রাখতে পারেননি যার সঙ্গে দর্শক আত্মীক যোগ খুঁজে পাবে। গল্পের সঙ্গে সঠিক বিচার করতে পারেননি তিনি।
মিউজিক
ছবির গল্পের তুলনায়, গান অনেকটা ভাল। ছবির মধ্যে গানগুলিকে উপভোগ করা যায়। 'দিল হ্যায় রাঞ্জনা' গানটি সবচেয়ে ভাল। সাঁইয়া গানটিও বেশ ভাল। ছবি দেখার বিরক্তি কিছুটা কমিয়ে দেয় গানগুলি।
শেষমেষ, একটা কথা বলতেই হয় যে এই ছবিটা কঙ্গনার ছবি ও অভিনয়ের মানকে অনেকটা নীচে নামিয়ে দিল। অভিনয়ের জোরে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন কঙ্গনা। কিন্তু এবার তাঁকে দেখতে হবে, যে তিনি কী ছবি করছেন, তার গল্প কেমন। যে ছবিতে নায়ক থাকবে না, এমন ছবি করতে পছন্দ করেন কঙ্গনা। তবে এবার চিত্রনাট্য নিয়ে তাঁর ভাবনাচিন্তা করা উচিত।