India or Bharat: নেহরুর সিদ্ধান্তে চমকে গিয়েছিলেন জিন্না, এতদিন পর ‘India’ নাম পেতে ফের ঝাঁপাবে পাকিস্তান!
India Name Change: সব ভাষাতেই দেশের নাম হিসেবে শুধু ‘ভারত’ ব্যবহারের দাবি তুলছে বিজেপি এবং তাদের সমর্থকরা।
নয়াদিল্লি: দেশের নাম ঘিরেও তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। ইংরেজিতে ব্যবহৃত ‘India’ বাদ দিয়ে, সব ভাষাতেই শুধু ‘ভারত’ ব্যবহারের দাবি তুলছে বিজেপি এবং তাদের সমর্থকরা। তাতে তীব্র আপত্তি তুলতে শুরু করেছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। সেই বিতর্কে এবার নাম জুড়ল পাকিস্তানেরও। সংসদে বিল এনে যদি সত্যিই ‘India’ নামটি বাদ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান ওই নামের উপর দাবি জানাতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে গুঞ্জন। (India or Bharat)
জি-২০ সম্মেলনের প্রাক্কালে ইংরেজি ভাষায় ছাপা রাষ্ট্রপতির নিমন্ত্রণপত্র থেকে সরকারি পুস্তিকা, এমনকি সাংবাদিকদের প্রবেশপত্রেও ‘India’-র পরিবর্তে দেশের নাম ‘ভারত’ লেখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফর এবং আসিয়ান সম্মেলনেরর ঘোষণাপত্রেও একই পথ অনুসরণ করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। চলতি মাসের বিশেষ অধিবেশনে সংসদে সেই নিয়ে বিল পেশ করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এর সপক্ষে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপি-র তরফে। (India Name Change)
ভারতের সংবিধানে দেশের নাম হিসেবে ‘ভারত’ এবং ‘India’, দুইয়েরই উল্লেখ রয়েছে। তাই কেনই বা একটিকে বাদ দিতে হবে, কেনই বা যে কোনও একটিকে রাখতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই আবহেই এই বিতর্কে নাম জড়িয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের। কাঁটাতারের বেড়া বিভাজন ঘটালেও, সাড়ে সাত দশক আগেও ভারত-পাকিস্তান এক ছিল। তাই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার ‘India’ নামটি পরিত্যাগ করলে, রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হয়ে পাকিস্তান ওই নাম পেতে দাবি জানাতে পারে বলে আলোচনা জোর পায় নেট দুনিয়া এবং সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশে।
Just IN:— Pakistan may lay claim on name "India" if India derecongnises it officially at UN level. - local media
— South Asia Index (@SouthAsiaIndex) September 5, 2023
— Nationalists in Pakistan have long argued that Pakistan has rights on the name as it refers to Indus region in 🇵🇰.
South Asia Index নামের একটি ভেরিফায়েড ট্যুইটার (অধুনা X) ud?হ্যান্ডল থেকেও এই দাবি তোলা হয়। লেখা হয়, ‘India নামটি পেতে দাবি জানাতে পারে পাকিস্তান।ভারত নামটি পরিত্যাগ করলে রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হতে পারে তারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে তেমনই খবর মিলছে। পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে, India বলতে সিন্ধু উপত্যকাকে বোঝায়। তাই ওই নামের উপর তাঁদেরও সমান অধিকার রয়েছে’।
পাকিস্তান সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করা হলেও, দেশের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নাও ‘India’ নাম ব্যবহারের ঘোর বিরোধী ছিলেন। দেশ ভাগ হলে সংখ্যালঘুদের দেশের নাম পাকিস্তান রাখার পক্ষপাতীই ছিলেন তিনি। চৌধুরী রহমত আলি ১৯৩৩ সালে পাকিস্তান নামটির প্রস্তাব তোলেন প্রথমে। দেশের উত্তরের পাঁচটি প্রদেশ, পঞ্জাব (P), আফগান প্রদেশ (A), কাশ্মীর (K), সিন্ধু (S) এবং বালুচিস্তানের শেষ তিন অক্ষর (tan) থেকে পাকিস্তান নামটি বের করেন রহমত। পৃথক ইসলামি দেশ তৈরির দাবিকে সামনে রেখে তাতে যুক্ত করা হয় ইংরেজির ‘I’ যুক্ত হয় I
আরও পড়ুন: India or Bharat: ‘হিন্দুস্তান’, ‘মেলুয়া’, ‘জম্বুদ্বীপ’, পুরাণ থেকে বেদ, এক দেশের হরেক নাম
লর্ড মাউন্টব্যাটেন পরবর্তী কালে জানান যে, ভারত বা পাকিস্তান, কোনও দেশই ‘India’ নামটি ধরে রাখতে চায় না বলে ধারণা জন্মেছিল জিন্নার মনে। তাই জওহরলাল নেহরু যখন ‘India’ নামটি ধরে রাখার পক্ষে আবেদন জানান এবং তাতে অনুমোদন দেন মাউন্টব্যাটেন, ক্ষুব্ধ হন জিন্না। কারণ সিন্ধু সভ্যতা থেকেই ‘India’ নামটির উৎপত্তি। তাই ওই নাম ভারতের দখলে গেলে, বিশ্ব দরবারে এমনিতেই ভারত বেশি গুরুত্ব পেয়ে যাবে বলে বুঝতে পারেন তিনি। দেশভাগ হলে সিন্ধু নদ উপত্যকার সিংহভাগ অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু জমির দখল থাকলেও, নাম হাতছাড়া হওয়ায় মেজাজ হারান জিন্না। তাই ধর্মের নিরিখে ভাগ হওয়া দেশের নাম ‘হিন্দুস্তান’ই হওয়া উচিত বলে মত ছিল তাঁর।
মুসলিম লিগের তরফেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে মাউন্টব্যাটেনকে চিঠিও দেন জিন্না। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিন্নাকে লন্ডনে আয়োজিত ইন্ডিয়ান অ্যান্ড পাকিস্তানি আর্ট প্রদর্শনীতে আমন্ত্রণ জানান মাউন্টব্যাটেন, সাম্মানিক প্রেসিডেন্ট হওয়ারও প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন জিন্না। জবাবি চিঠিতে লেখেন, ‘কোনও রহস্যজনক কারণে হিন্দুস্তান India নামটি গ্রহণ করেছে। তাদের এই নাম অত্যন্ত বিভ্রান্তকর। এতে ধন্দ তৈরি হতে পারে’। ভারতের নাম ‘হিন্দুস্তান’ হওয়া উচিত বলে মত ছিল তাঁর।
ইতিহাসবিদদের মতে, ‘হিন্দুস্তান’-এর পরিবর্তে ‘India’ এবং ‘ভারত’, এই দুই নাম ধরে রেখে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন নেহরু। কারণ এতে ধর্মের নিরিখে দেশভাগের তত্ত্ব যেমন খারিজ করা যাবে, তেমনই ভারতের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসও অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হবে বলে মনে হয়েছিল তাঁর। সিন্ধু সভ্যতা এবং তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই ‘India’ নামটি ধরে রাখার পক্ষে ছিলেন নেহরু, যা অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলেন জিন্না। তাই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন তিনি।