Mamata Banerjee: 'মমতাকেই সমর্থন, কেউ আপত্তি করলেই বা কী?' বললেন লালুও, I.N.D.I.A-র নেতৃত্ব নিয়ে কোণঠাসা কংগ্রেস
I.N.D.I.A Bloc: অতি সম্প্রতি I.N.D.I.A শিবিরকে নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মমতা।
নয়াদিল্লি: নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে আরও চওড়া হল বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A শিবিরে। রাহুল গাঁধী নন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোটের নেত্রী দেখতে চান বলে এবার জানালেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD)- সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। এ নিয়ে কারও আপত্তি করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করলেন লালু। অর্থাৎ বিরোধী জোটের আরও এক শরিক মমতাকে নেতৃত্বে দেখতে চেয়ে সওয়াল করলেন। ফলে অস্বস্তি আরও বাড়ল কংগ্রেসের। কারণ মমতাকে জোটের মাথায় রাখা নিয়ে সম্প্রতি আপত্তি শোনা গিয়েছিল দলের অন্দর থেকে। (Mamata Banerjee)
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরই সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটকে এককাট্টা করতে নামেন মমতা। দেরিতে হলেও সেই জোট গঠিত হয় এবং জোটের নামকরণও তিনিই করেন বলে জানান মমতা। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মমতা। সকলে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বসেও তিনি জোটকে নেতৃত্ব দিতে পারেন বলে জানান। এর পরই বিরোধী শিবির থেকে এক এক করে অনেকে মমতার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন লালু। (I.N.D.I.A Bloc)
বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নিয়ে মমতা যে মন্তব্য করেছেন, সেই নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে লালু বলেন, "কংগ্রেসের আপত্তিতে কিছু যায় আসে না। আমরা মমতাকে সমর্থন করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া উচিত (I.N.D.I.A শিবিরের)। ওঁর নেতৃত্বে সকলের সায় দেওয়া উচিত।" এর আগে, লালুর ছেলে তেজস্বী যাদবও মমতার পক্ষেই সওয়াল করেন। জানান, মমতাকে নেতৃত্বে বসানোয় কোনও আপত্তি নেই তাঁর, তবে এব্যাপারে সর্বসম্মতি প্রয়োজন।
#BigBreaking 🚨
— Spandan Gain (@GainSpandanLIVE) December 10, 2024
RJD founder & veteran leader Shri Lalu Prasad Yadav ji backs @MamataOfficial di to lead the #INDIAAlliance after support from Shiv Sena, Samajwadi Party & others.
🗣️ "We will support Mamata ji. She should be given leadership. We will form the government again in… pic.twitter.com/iVFWuAlbiY
অতি সম্প্রতি I.N.D.I.A শিবিরকে নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মমতা। কংগ্রেসকে কার্যত ঠুকেই তিনি বলেন, "সবাইকে নিয়ে চলতে হবে (কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে)। আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে, সবকিছু যাতে মসৃণভাবে চলে, তা নিশ্চিত করব। আমি বাংলার বাইরে যেতে চাই না। কিন্তু বাংলা থেকেই সবকিছু চালাতে পারি।" মমতার এই মন্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হতে সময় লাগেনি। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি রাহুলের চেয়ে মমতার দিকে শরিকদের সমর্থন বেশি? I.N.D.I.A শিবিরকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে রাহুলের চেয়ে কি মমতাকে এগিয়ে রাখছেন সকলে? সেই প্রশ্ন আরও জোরাল হয়ে ওঠে যখন বিরোধী শিবিরের একে একে অনেকেই মমতার সমর্থনে মুখ খুলতে শুরু করেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, না NDA, না I.N.D.I.A কোনও পক্ষে যোগ না দিয়ে এতদিন নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল যে YSR কংগ্রেস পার্টি, এমনকি সংসদে বিল পাসের ক্ষেত্রে যারা বিজেপি-কে সমর্থন জুগিয়ে আসছিল এতদিন, তারাও এখন I.N.D.I.A জোটের প্রধান হিসেবে মমতাকে দেখতে চাইছে। দলের রাজ্যসভা সাংসদ বিজয়সাই রেড্ডি বলেন, "I.N.D.I.A শিবিরকে নেতৃত্ব দেওযার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আদর্শ। জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী অভিজ্ঞতা রয়েছে ওঁর। ৪২টি লোকসভা আসন রয়েছে যে রাজ্যের, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। বার বার নিজেকে প্রমাণ করেছেন উনি।"
এর আগে, সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র উদয়বীর সিংহ বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি I.N.D.I.A জোটকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী হন, সেক্ষেত্রে বাকিদের বিষয়টি নিয়ে ভআবনা-চিন্তা করা উচিত, ওঁকে সমর্থন জানানো উচিত। এতে জোটের হাত শক্ত হবে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে রুখে উনি দেখিয়ে দিয়েছেন। ওঁর জন্য সহানুভূতি রয়েছে আমাদের। অনেক আগে থেকেই ওঁর সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক আমাদের।" শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের কথা জানি আমরা। আমরা চাই মমতা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা সকলে একজোট। কোনও মতভেদ থাকলেও, তা ক্ষুদ্র। কলকাতা গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব।"
মমতাকে জোটের মাথায় বসানোর সপক্ষে কিছু না বললেও, কংগ্রেসের সমালোচনা করেছে বামেরাও। ডি রাজার কথায়, "কংগ্রেসের উচিত আত্মসমীক্ষা করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে I.N.D.I.A জোটের বৈঠক ডাকা অত্যন্ত জরুরি। কংগ্রেস হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে শরিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। I.N.D.I.A জোটের শরিকদের কথা শুনলে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের ফলাফল অন্য হতো।" সমালোচনার মুখে পড়ে কংগ্রেস নেত্রী বর্ষা গায়কোয়াড় বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন মনে করতে পারেন, কিন্তু আমরা তেমন ভাবছি না। ওঁর কথায় ওঁর দল চলতে পারে। আমরা কংগ্রেসের কথায় চলি।"
কিন্তু যেভাবে বিরোধী জোটে মমতার সপক্ষে সমর্থন বাড়ছে, তাতে কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে অহং সরিয়ে রেখে জোটের স্বার্থ দেখতে আহ্বান জানিয়েছেন। কল্যাণের কথায়, "কংগ্রেসকে বুঝতে হবে যে ওদের নেতৃত্বে I.N.D.I.A জোট ব্যর্থ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি নেতৃত্বে আসেন, অনেক ভাল ফল হবে। জোটের একজন নেতা প্রয়োজন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক লড়াইটা লড়তে জানেন। কংগ্রেস উচিত অহং সরিয়ে রাখা। এই অহং থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একদা দূরে সরিয়ে দিয়েছিল ওরা। এখন দেখুন, রাজনীতিতে মমতা কী করছেন।" সূত্রের খবর, I.N.D.I.A জোটের রাশ মমতার হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে বৈঠকে বসছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং শরদ পওয়ার। সেখান থেকেই মমতার হয়ে সওয়াল আরও জোরাল হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।