Voyager 1 Spacecraft: মহাশূন্যের গভীরে রোগে কাবু হয়ে ভুল বকছিল, পৃথিবী থেকেই শুশ্রূষা শুরু দীর্ঘজীবী মহাকাশযানের
NASA News: গত নভেম্বর মাসে Voyager 1-কে নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। ভুল বকতে শুরু করে সে, যার কোনও অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না।
নয়াদিল্লি: সৌরজগৎকে ভাল করে চেনা শুরু তার হাত ধরেই। মানবজাতির সেবায় মহাশূন্যে নিভৃতযাপন করে চলেছে। এক বছর বা এক দশক নয়, প্রায় পাঁচ দশক ধরে পৃথিবীতে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়ে চলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র মহাকাশযান Voyager 1. একাকীত্ব এবং বার্ধক্যের ভারে সম্প্রতি সেটি কাবু হয়ে পড়েছিল, এমনকি ভুল বকতেও শুরু করেছিল। কিন্তু নাড়া দিতেই আবারও মানবজাতির সেবার কাজে হাত দিল সে। Voyager 1-কে নিয়ে তাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে বিজ্ঞানজগৎ। (Voyager 1 Spacecraft)
গত নভেম্বর মাসে Voyager 1-কে নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। পৃথিবীতে সে যে তথ্য পাঠাচ্ছিল, তার বেশিরভাগই বোধগম্য হচ্ছিল না বিজ্ঞানীদের। আবার কিছু তথ্য একেবারেই অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক এবং ভুল বলে ধরা পড়ে। NASA-র Jet Propulsion Laboratory নিয়ন্ত্রণ করে Voyager 1 মহাকাশকে। সেখানকার বিজ্ঞানীরা জানান, মহাকাশযানটির কথাবার্তা যথেষ্ট অসংলগ্ন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। মহাকাশযানটির আয়ু শেষ হয়ে এসেছে বলেই মনে করছিলেন তাঁরা। (NASA News)
কিন্তু Voyager 1 মহাকাশযানের আয়ু শেষ হয়নি মোটেই, বরং সে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলে জানা গেল এবার। অসুস্থতা বুঝতে পেরেই দাওয়াই দেওয়া হয়, তাতেই সাড়া দিতে শুরু করেছে সে। নিজের রোগের কথা জানাচ্ছে নিজেই, সেই মতো পৃথিবী থেকে কাজ চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। শরীরের কোথায়, কী সমস্যা হচ্ছে, সেই নিয়ে বিজ্ঞানীদের ব্যবহারযোগ্য তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে সে।
আরও পড়ুন: Zero Shadow Day:ছায়াহীন দিন বেঙ্গালুরুতে! আর ক'ঘণ্টাতেই ঘটতে চলেছে এই মহাজাগতিক ঘটনা
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে Voyager 1-এর পাঠানো কোনও তথ্যের অর্থ উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। পৃথিবী থেকে পাঠানো নির্দেশ গ্রহণ করছিল আগের মতোই, অন্য় আচরণও স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু পাল্টা যে জবাব পাঠাচ্ছিল সে, তা ছিল অসংলগ্ন। বার্ধক্য Voyager 1-কে কাবু করে ফেলেছে প্রথমে ধরে নিলেও, হাল ছাড়েননি বিজ্ঞানীরা। তাই চেষ্টা-চরিত্র চলছিল।
শেষ পর্যন্ত মার্চ মাসে অসুস্থতার কারণ জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, মহাকাশযানে যে তিনটি কম্পিউটার রয়েছে, যাকে Flight Data Subsystem বলা হয় (FDS)। ওই FDS-ই সব তথ্য একত্রিত করে পৃথিবীতে পাঠায়। FDS-এর স্মৃতিশক্তি ধরে রাখে যে চিপ এবং কম্পিউটারের কিছু সফ্টওয়্যার কোড বিকল হয়েছে বলে জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা, যে কারণে কোনও তথ্যের অর্থ উদ্ধার করা যাচ্ছিল না।
সশরীরে গিয়ে Voyager 1-এর রোগ নিরাময়ের উপায় নেই। তবে পৃথিবীতে বসেই বিকল হয়ে যাওয়া কোডটিকে FDS মেমরির অন্যত্র সরানো হয়। কিন্তু মাত্র একটি স্থানে গোটা কোডটিকে ধরানোর জায়গা ছিল না। তাই অন্য উপায় বের করার চেষ্টা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত কয়েক ভাগে কোডটিকে ভাগ করে FDS মেমরির ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রাখা হয়। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রাখা হলে, যাতে সামগ্রিক ভাবে যাতে ওই কোডটি কার্যকরী থাকে, তার জন্য নির্দিষ্ট যে কোডটির কাঁধে তথ্য পাঠানোর দায়িত্ব, সেটিকে চিহ্নিত করা হয়। গত ১৮ এপ্রিল ওই বিশেষ কোডটিকে নতুন অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
Sounding a little more like yourself, #Voyager1.
— NASA JPL (@NASAJPL) April 22, 2024
For the first time since November, Voyager 1 is returning useable data about the health and status of its onboard engineering systems. Next step: Enable the spacecraft to begin returning science data again: https://t.co/eZyqo7uERu pic.twitter.com/6YZM33Mp48
বর্তমানে পৃথিবী থেকে ১৫০০ কোটি মাইল দূরে অবস্থান করছে Voyager 1. পৃথিবী থেকে ওই মহাকাশযানে রেডিও সিগনাল পৌঁছতে সময় লাগে সাড়ে ২২ ঘণ্টা। আবার সেখান থেকে পৃথিবীতে রেডিও সিগনাল এসে পৌঁছতেও একই সময় লাগে। ২০ এপ্রিল সেই মতো Voyager 1 থেকে সিগনাল এসে পৌঁছয় পৃথিবীতে। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের কারিকুরি সফল হয়। পাঁচ মাস পর Voyager 1-এর স্বাস্থ্য এবং হাল-হকিকত সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী কয়েক সপ্তাহে Voyager 1-এর FDS সফ্টওয়্যারের ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাবেন বিজ্ঞানীরা। আপাতত যে কোডের উপর ভর করে মহাকাশযানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য মিলছে, সেটিকেও আরও ঠিকঠাক ভাবে সাজানো হবে। আগামী দিনেও কোথাও কোনও ঝুঁকি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখবেন বিজ্ঞানীরা।
১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর Voyager 1 মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ করে NASA. তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বছরই ২০ অগাস্ট উৎক্ষেপণ হয় Voyager 2 মহাকাশযানের। ক্রমান্বয় অনুযায়ী পিছিয়ে থাকলেও, Voyager 1 মহাকাশযানের আগে পৃথিবী থেকে রওনা দেয় Voyager 2. কিন্তু গন্তব্যে আগে পৌঁছয় Voyager 1. ১৯৭৯ সালের ৫ মার্চ বৃহস্পতিতে পৌঁছে যায় সে। ১৯৮০ সালের ১২ নভেম্বর পৌঁছয় শনিতে। সেই নিরিখে Voyager 2 মহাকাশযান ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই বৃহস্পতিতে এবং ১৯৮১ সালের ২৫ অগাস্ট শনিতে পৌঁছয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে দুই মহাকাশযানের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু একের পর এক সাফল্যে NASA-র বিজ্ঞানীরা তাদের দিয়ে আরও দুই গ্রহে অভিযান চালানো সিদ্ধান্ত নেন, ইউরেনাস এবং নেপচুনে। NASA-র দাবি, শুধুমাত্র বৃহস্পতি এবং শনিতে গিয়ে অভিযান শেষ করা হলেও, প্রাপ্ত তথ্য থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের আস্ত বই লিখে ফেলা সম্ভব ছিল। কিন্তু গত পাঁচ দশক ধরে Voyager অভিযান থেকে যে সমস্ত তথ্য সামনে এসেছে, তা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সৌরজগৎকে আরও ভাল করে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। Voyager 1 প্রথম মহাকাশযান, যা পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে, আন্তঃনাক্ষত্রিক অবস্থানে পৌঁছতে সফল হয়।
অত্যন্ত কম জ্বালানি ব্যবহার করে Voyager 1 এবং Voyager 2 চারটি গ্রহের চারিদিকে বিচরণ করে NASA. বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনের পারস্পরিক বিন্যাস সম্পর্কেও বিশদ ধারণা জন্মায় তাদের পাঠানো তথ্য থেকেই। সেই কারণেই Voyager অভিযানকে ঘিরে বাড়তি আবেগ রয়েছে NASA-র বিজ্ঞানীদের মধ্যে।