NorthEast United vs Mohammedan: শক্তিশালী নর্থইস্টের কাছ থেকে পয়েন্ট কাড়ল মহমেডান, ম্যাচ গোলশূন্য ড্র
Indian Super League: গত দুই ম্যাচে আট গোল করা নর্থইস্ট ইউনাইটেড শুক্রবার নিজেদের ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয় মহমেডানের দুর্ভেদ্য রক্ষণের জন্য।
গুয়াহাটি: ওড়িশা এফসি-র পর এ বার নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছ থেকেও পয়েন্ট কেড়ে নিল মহমেডান এসসি (NorthEast United FC vs Mohammedan SC)। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের গোলমেশিন আলাদিন আজারেইকে আটকে রেখে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের গোল অক্ষত রেখে গোলশূন্য ড্র করল কলকাতার সাদা-কালো ব্রিগেড।
গত দুই ম্যাচে আট গোল করা নর্থইস্ট ইউনাইটেড শুক্রবার নিজেদের ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয় মহমেডানের দুর্ভেদ্য রক্ষণের জন্য। চলতি লিগে এই প্রথম গোলশূন্য ড্র করল তারা। যা মহমেডান এসসি-র মতো পয়েন্ট টেবলের একেবারে নীচে থাকা দলের পক্ষে যথেষ্ট কৃতিত্বের।
দলের তিন বিদেশী অ্যাটাকারকে ছাড়াই খেলতে নামা মহমেডান এসসি এ দিন শুরু থেকেই বিপক্ষের আক্রমণ আটকানোর পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামে। একশোরও বেশি মিনিট সমান তীব্রতায় লড়াই করে সেই লক্ষ্য পূরণ করে তারা। নিজেদের আক্রমণ ও স্কোরিংয়ে যে সমস্যা রয়েছে, এই বাস্তব সত্যিকে মেনে নিয়েই দলের রক্ষণকে ক্রমশ দুর্ভেদ্য করে তোলার দিকে মনোনিবেশ করছেন তাদের রাশিয়ান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ। তিন পয়েন্টের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে খালি হাতে ফেরার চেয়ে প্রতি ম্যাচে এক পয়েন্ট করে অর্জন করলেও যে লিগ টেবলে বেশ কিছুটা ওপরে ওঠা যাবে, তা বুঝে গিয়েছে তাঁর দল। এ বার সেই রাস্তাতেই হাঁটছে তারা।
শুক্রবার নিজেদের মাঠে জিততে পারলে এফসি গোয়াকে টপকে লিগ টেবলে তিন নম্বরে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ ছিল হুয়ান পেদ্রো বেনালির দলের সামনে। কিন্তু সেই রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়াল মহমেডান এসসি। কয়েক দিন আগেই মুম্বই সিটি এফসি-কে তাদের ঘরের মাঠে ৩-২-এ হারিয়ে এসেছে গুয়াহাটির দল। নিজেদের মাঠে জামশেদপুর এফসি-কে ৫-০-য় ও ওড়িশা এফসি-কে ৩-২-এ হারিয়েছে তারা। সেই নর্থইস্ট এ দিন মহমেডানের বিরুদ্ধে একটিও গোল করতে পারেনি, যা দেখে তাদের কোচ শুধু যে হতাশ হয়েছেন, তা নয়, যথেষ্ট ক্ষুব্ধও তিনি। ম্যাচের পর দলের প্রতি খেলোয়াড়কে রীতিমতো ধমক দিতে দেখা যায় তাঁকে।
চলতি লিগের অভিযান যে শহর থেকে শুরু করেছিল তারা, সেই কলকাতার তিন দলই এ বার তাদের যথেষ্ট বেগ দিয়েছে। মোহনবাগান এসজি-র কাছে দুই ম্যাচেই হেরেছে তারা। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও একমাত্র ম্যাচে হারে নর্থইস্ট। মহমেডানকে প্রথম ম্যাচে হারালেও দ্বিতীয় ম্যাচে আটকে গেল। এখন শুধু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই ম্যাচ বাকি তাদের।
এ দিন দুই বিদেশীকে রেখে প্রথম এগারো নামায় মহমেডান। আক্রমণে অ্যালেক্সি গোমেজ ও রক্ষণে ফ্লোরেন্ট অগিয়ে। কার্লোস ফ্রাঙ্কাকে বেঞ্চে রাখা হয়। মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভ, ফরোয়ার্ড সিজার মানজোকি ও ডিফেন্ডার জোসেফ আজেই চোট পেয়ে দলের বাইরে। কার্ড সমস্যায় খেলতে পারেননি ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক আদিঙ্গা। অন্যদিকে, গিলেরমো হিয়েরোর জায়গায় নেস্টর আলবিয়াখকে রেখে প্রথম এগারো নামায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড।
প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করতে না পারলেও এ দিন ৬০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখে নর্থইস্ট। দুই দলই দুটি শট লক্ষ্যে রাখে। মোট ২৫টি শট নেন আলাদিন, গিলেরমোরা। উইং প্লে-তেও নর্থইস্ট এ দিন অনেক এগিয়ে ছিল। তারা মোট ২৭টি ক্রস দেখানে, যেখানে মহমেডানের ক্রসের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮টি। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের (২৯) আটকে রাখার সংকল্প নিয়েই যে নেমেছিল তারা, সেই ইঙ্গিত তাদের পারফরম্যান্সেই ছিল।
ফ্রাঙ্কা ও কাসিমভ এ দিন না থাকায় একা অ্যালেক্সি গোমেজের ওপরই আক্রমণের দায়িত্ব পড়ে। তাঁকে সাহায্য করেন বিকাশ ও প্রথম আইএসএল ম্যাচে নামা অ্যাডিসন সিং। মহমেডান যেখানে আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করে, সেখানে ১৭টি সুযোগ পায় নর্থইস্ট। ফাইনাল থার্ডে ৮৫বার প্রবেশ করে তারা। বিপক্ষের বক্সে ২৮বার বল ধরেন তাদের ফুটবলাররা। কিন্তু সাদা-কালো ব্রিগেডের শৃঙ্খলাবদ্ধ রক্ষণে একবারও ফাটল ধরাতে পারেনি তারা।
মরক্কান ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই ১৪টি গোল করে লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার হতে পারেন। কিন্তু তিনি কলকাতার তিন প্রধানের বিরুদ্ধে শেষ চারটি ম্যাচে কোনও গোল করতে ব্যর্থ হলেন। মহমেডানের বিরুদ্ধে প্রথম লিগের ম্যাচে ৯৪ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে জেতান তিনি। তার পর থেকে কলকাতার দলের বিরুদ্ধে আর কোনও গোল নেই তাঁর।
মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল যে ভাবে কড়া ম্যান মার্কিংয়ে রেখে আলাদিনকে অকেজো করে দিয়েছিল, এ দিন মহমেডানও দীর্ঘদেহী মহম্মদ ইরশাদকে তাঁর পাহাড়ায় রেখে নর্থইস্টের আক্রমণের অর্ধেক শক্তি নষ্ট করে দেয়। সারা ম্যাচে মহমেডানের বক্সে মাত্র ন’বার বলে পা ছোঁয়ানোর সুযোগ পান তিনি। কিন্তু আটটির বেশি শট নিতে পারেননি আলাদিন। তার মধ্যে মাত্র একটি ছিল লক্ষ্যে। বাকি সবই গোলের বাইরে। চারবার ড্রিবল করে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করলেও তিনি মাত্র একবার সফল হন। কুড়িবার বল দখলের লড়াইয়ে জেতেন মাত্র সাতবার।
আরও পড়ুন: মাঠে সাংঘাতিক ঘটনা! হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল দুই ক্রিকেটারকে
রক্ষণে এ দিন দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেন মহমেডানের ফরাসী ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্ট অগিয়ে, যিনি আটটি ক্লিয়ারেন্স ও পাঁচটি ব্লক করেন। আটটি ডুয়েলের মধ্যে সাতটিতেই সফল হন। দু’টি ট্যাকল করেন এবং দু’টিতেই সাফল্য পান। তিনবার বল পুনরুদ্ধার করেন। এমন পরিসংখ্যান যে কোনও ডিফেন্ডারের কাছেই ইর্ষণীয়। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান তিনি। মূলত তিনিই এ দিন দলের রক্ষণকে শৃঙ্খলার জালে বেঁধে রেখেছিলেন।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ৬০ মিনিটের মাথায় গোমেজ একটি দূরপাল্লার ফ্রি-কিক নেন, যা নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি’র ডিফেন্সিভ ওয়াল সহজেই পেরিয়ে সরাসরি গোলের দিকে যায়। কিন্তু গোলকিপার গুরমিত সিং তা দুর্দান্ত দক্ষতায় প্রতিহত করেন। এটিই ছিল এ দিনের ম্যাচে মহমেডানের সবচেয়ে ভাল সুযোগ। সেই প্রথম তাদের কোনও শট গোলের লক্ষ্য ছিল। তাদের অভিজ্ঞ গোলকিপার পদম ছেত্রীকে এ দিন বেশি পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেনি নর্থইস্ট। সারা ম্যাচে মাত্র একটি সেভ করেন তিনি। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: বেহালায় গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে সৌরভ-কন্যা সানা, আটক বাসচালক