Firhad Hakim: 'আর্থিক উন্নয়ন ও নগরায়ন'ই বাড়াচ্ছে ডেঙ্গির প্রকোপ, ফিরহাদ হাকিমের যুক্তিতে শুরু বিতর্ক
Dengue Scare: জেলায় জেলায় চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতেই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর এই যুক্তিতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
কলকাতা: আর্থিক উন্নয়ন ও নগরায়নের কারণেই গ্রামীণ এলাকায় বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ (Dengue Scare)। জেলায় জেলায় উদ্বেগজনক ডেঙ্গি পরিস্থিতির মধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) এই যুক্তিতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য়ের উদ্য়োগ ও পরিকাঠামো নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরা।
ফিরহাদের 'ডেঙ্গি' তত্ত্ব নিয়ে শুরু বিতর্ক
শুক্রবার পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আগে শহর এলাকায় ডেঙ্গি বেশি হত। এখন গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গির প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। শহর থেকে গ্রামের ডেঙ্গির মাত্রা অনেক বেশি হচ্ছে। এটার কারণ হচ্ছে আর্থিক উন্নয়ন। এর আগে গ্রামীণ এলাকায় চালের বাড়ি থাকত। ঢালাই করা ছাদ থাকত না। ঢালাই করা ছাদ না থাকায় কাপ ভাঁড় নিয়ে এনে রাখতে পারত না কাকে। উপর থেকে গড়িয়ে পড়ে যেত। খোলা নর্দমা থাকত, একটু গোবর থাকত, গরু থাকত, তাই সেই কারণে ডেঙ্গি মহামারীর আকার নিত না।'
জেলায় জেলায় চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতেই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর এই যুক্তিতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য়ের উদ্য়োগ ও পরিকাঠামো নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। চিকিৎসক ও বিজেপি নেতা ইন্দ্রনীল খাঁ কটাক্ষ করে বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে তো তাহলে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি বীরভূমে হওয়ার কথা। যেখানে রাস্তার ধারে ধারে উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি যেমন জ্ঞান বিজ্ঞানের ঊর্ধ্বে। তাঁরই তো দলের মন্ত্রী, ফলে তিনি এমন বিজ্ঞানের ঊর্ধ্বে যুক্তি দিতেই পারেন।'
যে আর্থিক উন্নয়ন ও নগরোন্নয়নের যুক্তি দিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়মন্ত্রী, সেখানে জেলায় জেলায় কিন্তু উদ্বেগজনক ডেঙ্গি পরিস্থিতি। পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশডিহা এলাকায় এ পর্যন্ত ৫৯ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা কনিকা মণ্ডল বলেন, 'দিদা আছে অসুস্থ। ভাই ছিল। ছোট মামি ছিল। আর এই ছোট ভাইটা। ৪ জন। ওদের সবার ডেঙ্গি ছিল। তিনজন হাসপাতালে ছিল। সবাই আলাদা আলাদা হাসপাতালে ছিল।'
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার এলাকা পরিদর্শন করেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব জলি চৌধুরী। নোংরা সাফাইয়ের পাশাপাশি নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়ার উপর জোর দেওয়া হয়।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব জলি চৌধুরী বলেন, 'দুর্গাপুরে পলাশডিহাতে ৫৯টা কেস পেয়েছি। দুর্গাপুর পুরসভা অত্য়ন্ত তৎপরতার সঙ্গে ফিল্ড অ্য়াক্টিভিটি চালাচ্ছে। আমরা ভাঙা বালতি, টব, টায়ার তুলে নিচ্ছি। এটা উৎস। যেখানে কেস পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে যাতে আশেপাশে সমীক্ষা করা যায় সেটা বলা হয়েছে।'
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পূর্ব বর্ধমানের কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এই মুহূর্তে অজানা জ্বর নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৬০ জন। যাদের মধ্যে ৩ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।
কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতির কথায়, 'বেড সংখ্যা আমরা আগের থেকে বাড়িয়েছি। পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে মোট ১৪০টা বেড ছিল। ১৮০টা করেছি। আরও বাড়তি জ্বরের জন্য় ৪০ খানা ওয়ার্ড খুলেছি। জ্বরের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই বেডের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।'
মালদা জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ৭৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মালদা মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালের সুপার পুরঞ্জয় সাহা বলেন, 'ফিভার নিয়ে রুটিন পরীক্ষা করা হয়। এই বছরে কেস কমই আছে। প্রতিদিনই পরীক্ষা হয়। পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই মতোই এগোচ্ছে। মশা নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।'
নদিয়ার রানাঘাটেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ১২ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, 'ডেঙ্গির একটা আতঙ্ক প্রতি বছরই তৈরি হয় বর্ষা এলে। এই বছর রানাঘাটে একটু বেশি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। মানুষ একটু সচেতন হলেই এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।'
জেলায় জেলায় উদ্বেগজনক ডেঙ্গি পরিস্থিতির মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার বরানগর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি সচেতনতা অভিযানে বাড়ির ছাদে জমা জলে মিলল মশার লার্ভা। সেই বাড়িকে নোটিস ধরানো হয়।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন
https://t.me/abpanandaofficial