Hooghly News: ২০০ বছরের পীরের মেলা ও গঙ্গা দেবীর আরাধনা ঘিরে জমজমাট রাজবলহাট, নতুন আলুর ধোঁয়া ওঠা দমে মজে বাসিন্দারা
Hooghly Poush Sankranti Fair 2025: ২০০ বছরের পীরের মেলা ও গঙ্গা দেবীর আরাধনা রাজবলহাটে, গ্ৰামীণ এই মেলার মূল বৈশিষ্ট্য হল নতুন আলুর দম, মেলায় সামিল হয়ে স্মৃতির শহরে স্থানীয় বাসিন্দারা...
সোমনাথ মিত্র, হুগলি: নতুন আলু দিয়ে তৈরি আলুর দম। আর সেই আলুর দম খেতেই দামোদরের চরে ভিড় জমিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। শীতের মরসুমে সোনা রোদ গায়ে মেখে পিকনিকের মজা উপভোগ করছে আট থেকে আশি। জাঙ্গিপাড়া ব্লকের রাজবলহাটে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন "জাঁন্দা পৌষ সংক্রান্তি পীরের মেলাকে" কেন্দ্র করে এক অনন্য সম্প্রীতির নিদর্শন।
২০০ বছরের পীরের মেলা ও গঙ্গা দেবীর আরাধনা রাজবলহাটে
পৌষ সংক্রান্তির দিনে বাংলার গ্রাম গঞ্জে একাধিক উৎসব , মেলা আয়োজিত হয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া ব্লকের জান্দা এলাকার আলুর দমের মেলা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে এই মেলার প্রচলন হয়। হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে এই মেলা আয়োজিত করে থাকে। মেলাটি মূলত জান্দা পৌষ সংক্রান্তি পীরের মেলা নামে আয়োজিত হয়। আর পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন জান্দা পল্লী মঙ্গল সমিতির সদস্যরা। এলাকার হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে এই মেলায় অংশগ্রহণ করে।
গ্ৰামীণ এই মেলার মূল বৈশিষ্ট্য হল আলুর দম
মেলাতে গঙ্গা দেবীর আরাধনাও আয়োজিত হয়। তবে গ্ৰামীণ এই মেলার মূল বৈশিষ্ট্য হল আলুর দম। অর্থাৎ এই এলাকায় যে নতুন আলু ওঠে, সেই আলু দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকমের আলুর দম। নদীর পাড়ে কাগজ পেতে আলুর দম মুড়ি কিনে চলে খাওয়া দাওয়া। তার সাথে বিভিন্ন রকমের আলু ভাজা বেগুন ভাজা পাপড় ভাজা জিলিপির স্বাদ গ্রহণ ও করেন মানুষ। ছোট থেকে বড় পরিবারের সকলে মিলে পৌষ সংক্রান্তির দিনে একদম ছুটির মেজাজে পিকনিকের মতো মাঠে বসে খাওয়া-দাওয়ায় মেতে ওঠে । পাশাপাশি চলে দেদার আড্ডা।
'ছোটবেলায় বাবা মার হাত ধরে এই মেলায় আসতাম। আর এখন আমি, আমার স্ত্রী..'
৭৬ বছর বয়সী সুকুমার ভড় তিন বছর বয়স থেকে আজ ও এই মেলায় আলুর দম মুড়ি খেতে আসেন। তিনি জানান, 'ছোটবেলায় বাবা মার হাত ধরে এই মেলায় আসতাম। আর এখন আমি, আমার স্ত্রী আর আমার বন্ধু এই মেলা উপভোগ করতে এসেছি। সমস্ত কিছু কিনে এখানে খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ উপভোগ করছি।'বিয়ের পর এই প্রথমবারের জন্য এই মেলায় এসেছেন জাহাঙ্গিপাড়ার প্রিয়াঙ্কা দাস। তিনি জানান, 'এই মেলা সম্পর্কে আগে শুনেছি, এ বছর পরিবারের সাথে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানকার পরিবেশটাই আলাদা। প্রচুর মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এসেছে। অনেক মানুষ তাদের চিনিনা পাশাপাশি বসে আলুর দম মুড়ি খেতে আনন্দটাই আলাদা।'
'এই মেলা একটা সম্প্রীতির বার্তা দেয়'
সুপ্রিয় পাল জানান,' আমি ৩০বছর ধরে এই মেলায় আসছি। ছোটবেলায় বাবা মার সাথে আসতাম। বিয়ের পরেও এসেছি আর এখন ছেলে মেয়েদের সাথে আসছি। মুড়ি আলুর দমের পাশাপাশি শসা, পাপড় ঘুগনি সবই খাওয়া হয়।' রাজবলহাট ১- গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়দেব শীল জানান, সর্ব ধর্মের মানুষ এই মেলায় অংশগ্ৰহণ করেন। বাংলার বাইরে এই ধরণের মেলা খুব একটা দেখা যায় না।' রাজবলহাট ১-গ্রাম পঞ্চায়েতের শিল্প পরিকাঠামোর সঞ্চালক নঈম মল্লিক জানান, 'এই মেলা একটা সম্প্রীতির বার্তা দেয়। ২০০ বছরের পুরনো পীরের মেলার পাশাপাশি গঙ্গা দেবীর আরাধনা হয় এখানে। এই ধরনের নিদর্শন বাংলা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না।'