East Bengal: প্রথম কলকাতা ডার্বি জিতে লক্ষ্য পাঁচে পাঁচ করা, এখনও প্লে-অফে পৌঁছনোর আশায় ইস্টবেঙ্গলের মহেশ
Naorem Mahesh Singh: গত বছর ৩ এপ্রিল আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে শেষ গোল করেছিলেন নাওরেম মহেশ। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জোড়া গোলের প্রায় সাড়ে দশ মাস পরে গোল পেয়েছেন মহেশ।

কলকাতা: রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কলকাতা ডার্বিতে মহমেডান স্পোর্টিং-র বিরুদ্ধে (Mohammedan Sporting vs East Bengal) তাঁর গোল দিয়েই বিজয়াভিযান শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। আরও একটি অবধারিত গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে বিপক্ষের গোলকিপারের তৎপরতায় সেই সম্ভাব্য দর্শনীয় গোল থেকে বঞ্চিত হন নাওরেম মহেশ সিং (Naorem Mahesh Singh)।
রবিবার কলকাতা ডার্বিতে যেমন দীর্ঘদিন পরে গোলে ফেরেন মহেশ, তেমনই তাদের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপোও (Saul Crespo) অনেক দিন পরে মাঠে ফিরে ও গোল করে দলকে জেতান। তাই দুই তারকাই দলকে জিতিয়ে বেশ খুশি। মহেশ ও ক্রেসপো ছাড়াও ইস্টবেঙ্গলের প্রথম আইএসএল ডার্বিজয় নিশ্চিত করেন গত মরশুমে মহমেডানের হয়ে আইলিগে সবচেয়ে বেশি গোল করা তরুণ ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা।
গত বছর ৩ এপ্রিল আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে শেষ গোল করেছিলেন নাওরেম মহেশ। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। সেই গোলের প্রায় সাড়ে দশ মাস পরে গোল পেয়ে খুশি মহেশ ডার্বির পর ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে বলেন, “নিজের গোলের জন্য এবং দলের জয়ের জন্য আমি খুশি। কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। সেরা ছয়ের দৌড়ে আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোচ্ছি। সমর্থকদের সমর্থন ছাড়া এই জয় সম্ভব ছিল না। আজ মহমেডানের সমর্থকেরাও অনেকে মাঠে এসেছিল। সবাইকে ধন্যবাদ”।
রবিবার ম্যাচের ২৭ মিনিটের মাথায় মহেশকে লক্ষ্য করে অসাধারণ এক মাপা ফাইনাল পাস বাড়ান পিভি বিষ্ণু। মহেশ সেই বল নিয়ে প্রায় বাইলাইনের কাছে কঠিন কোণে চলে গিয়েও বাঁ পায়ে গোলে শট নেন, যা রোখা সম্ভব হয়নি গোলকিপারের পক্ষে।
শুধু গোলে ফেরাই নয়, ম্যাচের সেরার খেতাবও এ দিন জিতে নেন মহেশ। ৮৯ মিনিট মাঠে থেকে দু’টি শট নেন তিনি, দু’টিই ছিল লক্ষ্যে। তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন তিনি। মোট তিনটি ট্যাকল করেন, যার সবকটিই জেতেন তিনি।
গোল থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম: মহেশ
ম্যাচের পর দেওয়া সাক্ষাৎকারে মহেশ বলেন, “প্রথমার্ধে আমাদের পুরো দলের পারফরম্যান্স ভাল হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে ওরা ম্যাচে ফেরে। ফলে আমাদের একটু অসুবিধায় পড়তে হয়। সউল, ডেভিড মাঠে নামার পরে যখন গোল করে, তখন আমাদের তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত হয়”।
গত আইএসএল মরশুমে চারটি গোল করেছিলেন মহেশ ও দু’টি করিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পরে গোল পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমাকে বেশিরভাগই মাঝমাঠে খেলতে হয়। ফলে গোল থেকে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম। এই ম্যাচে আমি ১০-১৫ মিনিট উইংয়ে খেলেছিলাম। তাই গোলটা পেলাম”।
সউল ক্রেসপোর গোলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করেন মহেশ। তাঁর মতে, “সউল যখন মাঠে আসে, তখন মহমেডান আধিপত্য বিস্তার করছিল এবং আমরা ওদের বক্সের কাছে পৌঁছতে পারছিলাম না। তবে আমাদের ম্যাচটা শেষ করতে আরও গোল দরকার ছিল। কারণ, এক গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় ওরা আমাদের চাপে ফেলার চেষ্টা করে। সেই সময় সউল গোল করায় আমরা অনেকটা এগিয়ে যাই। তাও ওরা গোল করে ফের ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে, যা ডেভিডের গোলের পরে আর ওদের পক্ষে সম্ভব হয়নি”।
খুব সামান্য হলেও সেরা ছয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনও তাঁদের আছে বলে মনে করেন মহেশ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্লে অফে ওঠার সম্ভাবনা আমাদের আছে। তবে পুরোটাই আমাদের হাতে নেই। আমরা তো বাকি সব ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে জেতার চেষ্টা করব। তবে সেরা ছয়ে থাকা দলগুলো পয়েন্ট না খোয়ালে, আমাদের পক্ষে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যাবে। তবে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতেই হবে”।
অঙ্কের হিসেবে অস্কার ব্রুজোনের দলের প্লে-অফে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হলেও আছে। তাদের বাকি সব ম্যাচ জিততে হবে, যার মধ্যে পাঞ্জাব এফসি এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচও আছে। পরের ম্যাচেই পাঞ্জাবের মুখোমুখি হবে তারা। তবুও, তাদের প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জনের জন্য নর্থইস্টকে দু’টি ম্যাচ হারতে হবে। এ ছাড়া, কেরল ব্লাস্টার্স এফসিকে আরও চার পয়েন্ট হারাতে হবে, ওডিশা এফসিকে ছয় পয়েন্ট হারাতে হবে এবং চেন্নাইয়িন এফসিকে তাদের বাকি যে কোনও একটি ম্যাচে পয়েন্ট হারাতে হবে। তবে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচে হেরে গেলে তারা প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে যাবে।
গোলটা দরকার ছিল: ক্রেসপো
রবিবার ম্যাচের ৬১ মিনিটের মাথায় নন্দকুমার শেকরের বদলে সউল ক্রেসপোকে মাঠে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের সুফল পায় দল। মাঠে নামার মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই গোলের সন্ধান পান ক্রেসপো। বক্সের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় থাকা তাঁকে লক্ষ্য করে ক্রস পাঠান মেসি বৌলি এবং নিখুঁতভাবে ডান পায়ের নীচু শটে গোলের বাঁদিকের কোণ দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন ক্রেসপো। মোট ২৯ মিনিট মাঠে থেকে একটি শট গোলে রাখেন তিনি এবং সেটি থেকেই গোল পান। একটি গোলের সুযোগও তৈরি করেন ক্রেসপো।
এই গোলের পর ক্রেসপো ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই গোলটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, দু’মাস পরে মাঠে ফিরে আসাটা সোজা ছিল না। দলের পক্ষেও এই জয়টা খুবই জরুরি ছিল। গত ম্যাচে হারার পরে এই গোলটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই জন্যই আরও বেশি ভাল লাগছে”। ৭ ডিসেম্বর চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পাওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি মাঠে ফেরেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। এর মাঝে দলের ন’টি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে দল বেশ ক্ষতিগ্রস্থও হয়।
তাই ক্রেসপো গোল পেতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন তাঁর সতীর্থরা। সবচেয়ে বেশি খুশি হন গোলকিপার প্রভসুখন গিল, যিনি নিজের গোল ছেড়ে দৌড়ে বিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে আসেন। তাঁর এই উচ্ছ্বাস নিয়ে পরে আইএসএল মিডিয়াকে লাল-হলুদ গোলকিপার বলেন, “সউল অনেকদিন চোটের জন্য মাঠের বাইরে ছিল। গত ম্যাচে মাঠে ফিরলেও নিজের সেরাটা হয়তো দিতে পারেনি। কিন্তু এই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছে, সে জন্যই ও গোল করতেই অতটা দৌড়ে অপর প্রান্তে গিয়ে ওকে অভিনন্দন জানিয়ে আসি। সউল আমাদের দলের ইঞ্জিন। আমার দেখা অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ও। তাই ওর সঙ্গে খেলতে আমি ভালবাসি”।
রবিবারের জয় নিয়ে গিল বলেন, “এই জয়টা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনও চারটে ম্যাচ বাকি। এখন প্রতিটি ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনালের মতো। কাল থেকে পরবর্তী পাঞ্জাব-ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শুরু হবে আমাদের”। রবিবার ৮৮ মিনিট মাঠে থেকে দু’টি অনবদ্য সেভ করেন তিনি।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মহামেডানের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়, তাও প্রতিপক্ষকে প্রশংসায় ভরালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
