India or Bharat: বিল পাস হলেও অনুমোদন মেলেনি আজও, দেশের নাম ভারত করতে চায় BJP, অথচ বাংলার আবেদনে রা নেই!
West Bengal Name Change: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম এবং ইছামতীর ওপারে পূর্ববঙ্গের অবলুপ্তি, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে শুধু বাংলা রাখার নেপথ্যে অনেকে এই যুক্তি তুলে ধরেছিলেন।
আশাবুল হোসেন, অনির্বাণ বিশ্বাস ও রুমা পাল: পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে বাংলা (India or Bharat) করার প্রস্তাব পাস হয়েছে বিধানসভায়। তার পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও, সেই প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। এই নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। যদিও পুরো বিষয়টিই এখন বিশ বাঁও জলে। (West Bengal Name Change)
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম এবং ইছামতীর ওপারে পূর্ববঙ্গের অবলুপ্তি, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে শুধু বাংলা রাখার নেপথ্যে অনেকে এই যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। ২০১৯ সালে বিধানসভায় সেই সংক্রান্ত প্রস্তাবও পাস হয়েছিল। কিন্তু গত চার বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। রাজ্যের নাম বাংলা করার সেই প্রস্তাব আজও রাষ্ট্রপতি ভবনে আটকে রয়েছে।
এখন দেশজুড়ে যখন ভারত বনাম ইন্ডিয়া বিতর্ক,অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলানোর চেষ্টা এবং এখন পর্যন্ত তার পরিণতির কথা। এখন পশ্চিমবঙ্গের ইংরেজি নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল। আদ্যাক্ষর 'W'। এই ক্রম অনুযায়ী রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জায়গা তালিকায় শেষের দিকে। ফলে জাতীয়স্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার প্রতিনিধিদের বলার সুযোগ কমে যায়। এই যুক্তিতেই ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজ্যের নাম বদলের উদ্যোগ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৬ সালের ২ অগাস্ট মমতার মন্ত্রিসভায় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব পাস হয়। সে বছর ২৯ অগাস্ট প্রস্তাব পাস হয় বিধানসভাতেও। তখন রাজ্যের জন্য তিনটি নামের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাংলায় ‘বাংলা’, ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’। রাজ্য সরকার এই তিনটি নামের প্রস্তাব পাঠালেও কেন্দ্র জানায়, এক রাজ্যের তিনটি নাম হতে পারে না।
আরও পড়ুন: Cow Smuggling Case: অনুব্রতর রাজ্যে ফেরার আশা আরও ক্ষীণ? দিল্লিতে মামলা স্থানান্তরে উঠছে প্রশ্ন
সেই প্রেক্ষাপটে ২০১৮-র ২৬ জুলাই বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিন ভাষাতেই রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করে সরকার। বাম-কংগ্রেসের সমর্থনে তা পাসও হয়ে যায়। ২০১৯-এ রাজ্যসভায় তৃণমূলের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে নাম বদলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, রাজ্যের নাম পরিবর্তন করতে গেলে আগে সংবিধানে সংশোধন আনা প্রয়োজন। মোদি সরকারের তরফে এও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, রাজ্যের নাম বদলাতে গেলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, জি টোয়েন্টি সম্মেলন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রনেতাদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সূত্রের খবর, দেশের সম্মানের কথা ভেবে বিজেপি বিরোধী জোট I.N.D.I.Aর নেতা-নেত্রীরা সেই আমন্ত্রণরক্ষার ব্যাপারে মনস্থির করেছেন। সেই মতো দিল্লি যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও।
এ প্রসঙ্গে সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "দিল্লিতে প্রেসিডেন্ট অফ ভারত তিনি ডেকেছেন নৈশ ভোজ, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দৌড়াচ্ছেন। আমি মনে করি যাওয়াটা সমীচীন নয়। উনি ঠিক করবেন। প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া ডাকেননি নৈশ ভোজটা, ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট অফ ভারত। যেটা বেআইনি। অসংবিধানিক। কেন যাচ্ছেন? আর গেলেও উনি কি সঙ্গে একটা নেমপ্লেট নিয়ে যাবেন, যেখানে লেখা থাকবে চিফ মিনিস্টার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল নয়, চিফ মিনিস্টার অফ বাংলা/ বেঙ্গল। উনি তো নাম পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, দিল্লি সরকার করেনি । কত বার, কত রকম নাম বদল করার কথা বলেছেন, ১০ বছর ধরে চলছে। তাহলে উনি পারলে লিখে যান! ওরা যদি বেআইনি কাজ করে, তাহলে উনিও বেআইনি কাজ করুন!"
এরই মধ্য়ে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'INDIA বনাম ভারত, এটা বিজেপি-র বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা মাত্র। আসুন, আকাশ ছোঁয়া দাম, ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, বেকারত্ব, সীমান্ত সমস্যা এবং ডবল ইঞ্জিন সরকার ও তার ফাঁকা জাতীয়তাবাদের বক্তব্যের জন্য সরকারকে চেপে ধরি'। পশ্চিমবঙ্গেল নাম বাংলা করতেও কি চাপ বাড়ানো যায় না কেন্দ্রের উপর, উঠছে প্রশ্ন।