Shantiniketan News: শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙা নিয়ে নিন্দার ঝড়, এবার যা করল বোলপুর পুরসভা..
Abanindranath Tagore House Demolition: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আবাস' বাড়ি ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সর্বত্র নিন্দার ঝড়, চাপের মধ্যেই তড়িঘড়ি তালা ঝুলিয়ে কাজ বন্ধ করল বোলপুর পৌরসভা

ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বীরভূম: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আবাস' বাড়ি ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর থেকে শুরু করে প্রবীণ আশ্রমিকেরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার পরেই আসরে নামে বীরভূম জেলা প্রশাসন। জেলা শাসক নিজে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান।
এই চাপের মধ্যেই বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি তালা ঝুলিয়ে কাজ বন্ধ করল বোলপুর পৌরসভা৷ সাংবাদিক বৈঠক করে বোলপুর পুররসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, 'আমরা এই ভাঙার বিষয়ে কেউ কিছু জানতামই না৷ সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেই আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে তালা ঝুলিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি৷ তদন্ত শুরু করেছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কে বা কারা ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভেঙেছে৷ ঐতিহ্য ও রবীন্দ্র স্মৃতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর বোলপুর পৌরসভা।'
প্রসঙ্গত, শান্তিনিকেতনের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী তথা লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসত বাড়ি ভেঙে দেওয়া হল৷ প্রায় ১ বিঘে জায়গার উপর গাছে ঘেরা ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিবিজড়িত 'আবাস' বাড়িতে এখন ইট, রড বেরিয়ে অর্ধেকের বেশি ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৪১ সালে কবিপ্রয়াণের পর ১৯৪২ সালে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য হয়েছিলেন ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ সেই সময় এই বাড়িতে বাস করতেন তিনি৷ তাঁর নামানুসারেই এই এলাকার নামকরণ হয়েছে 'অবনপল্লী'। একদা বহু বিশিষ্ট মানুষজনের পদধূলি পরেছিল বাড়িটিতে৷ এমন একটি স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে দেওয়া হল৷
যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য থেকে অমর্ত্য সেনের পরিবারের সদস্যরা৷ এমনকি, ক্ষুব্ধ প্রবীণ আশ্রমিকেরা৷ সকলের বক্তব্য একটাই, এক এক করে শান্তিনিকেতনে ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে৷ হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি। প্রশাসনের এই বিষয়গুলিতে নজর দেওয়া উচিত৷ কারন, গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে তাঁরই ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি এভাবে ভেঙে দেওয়ায় উত্তাল শান্তিনিকেতন৷ জানা গিয়েছে, প্রায় ১ বিঘা জায়গা। এই জায়গা প্লট করে ৮ জনকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে৷ বহু বড় বড় গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। এই প্লটগুলিতে কটেজ হওয়ার কথা৷
এভাবেই গত দুই দশক ধরে জমি মাফিয়া, জমি হাঙরদের দখলে চলে যাচ্ছে বোলপুর-শান্তিনিকেতন। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে প্রশাসনের নির্দেশিকা তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে বিলাশবহুল আবাসন, কটেজ, হোলেল, রেস্তোরাঁ, লজ, হোটেল, বহুতল প্রভৃতি। যা নিয়ে কো হেলদোল নেই প্রশাসনের৷ এই অভিযোগ বহু৷ 'আমাদের ছোট নদী' কোপাইয়ের পাড় ও নদীগর্ভ দখল করে নির্মাণ, আদিবাসীদের জমি দখল করে নির্মাণ প্রভৃতির একাধিক অভিযোগের পরেও নির্বিকার প্রশাসন।
তবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙায় চর্তুদিকে নিন্দার ঝড় উঠতেই আসরে নামল বোলপুর পৌরসভা। পৌরসভার পক্ষ থেকে ভাঙার বাকিটুকু কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে গেটে। এমনকি, কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ অর্থাৎ, তদন্তশুরু করেছে বোলপুর পৌরসভা৷ তবে সকলের মত আরও আগে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হত৷ তাহলে বেঁচে যেত স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি৷
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির প্রতিবেশী তথা বিশ্বভারতীর পাঠভবনের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, "শুনে ভালো লাগলো বোলপুর পৌরসভা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে৷ তবে আরও আগে করলে এতটা ভাঙা হত না৷ আমাদের মত শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের উচিত এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলো রক্ষা করা৷ এই ধরনের ঘটনা জানতে পারলেই সকলকে দ্রুত জানানো। পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা।"
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের অন্যতম সদস্য তথা আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, "বিশ্বভারতীতে এখন সবই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে গড়ার ক্ষমতা নেই কারও। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িটা ভেঙে দেওয়া ঠিক হয়নি৷ যাকে বিক্রি করেছেন সে তার মূল্য বোঝেন না৷ ভেঙে দিয়েছে। এটা খুব অন্যায় হয়েছে। প্রশাসনের আরও আগে উৎসাহ নেওয়া উচিত ছিল।" নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভাই শান্তভানু সেন বলেন, "কত দিনের পুরনো বাড়ি৷ সেই ছোটবেলা থেকে দেখেছি৷ এর একটা ইতিহাস আছে। শান্তিনিকেতনবাসীর পথে নামা উচিত৷ প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷ এটা ঠিক হয়নি।"
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
