KKR EXCLUSIVE: চেন্নাইকে দেখলে তেতে যায় নাইটরা, বলছেন কেকেআরের প্রথম ট্রফি জয়ের নায়ক
ফের এক আইপিএলের ফাইনাল। আবার মুখোমুখি কলকাতা নাইট রাইডার্স আর চেন্নাই সুপার কিংস। মাঝে ৯ বছরের ব্যবধান। ২০১২ সালে সিএসকে-কে হারিয়েই প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেকেআর।
কলকাতা: ফের এক আইপিএলের (IPL) ফাইনাল। আবার মুখোমুখি কলকাতা নাইট রাইডার্স আর চেন্নাই সুপার কিংস। মাঝে ৯ বছরের ব্যবধান। ২০১২ সালে সিএসকে-কে হারিয়েই প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেকেআর।
আর সেই জয়ের নায়ক ছিলেন মনবিন্দর সিংহ বিসলা। একটা ম্যাচ যাঁকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। রাতারাতি হয়ে গিয়েছিলেন নায়ক।
৯ বছর আগে চেন্নাইয়ের এক রাত। এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের কার্যত হাতের মুঠো থেকে আইপিএল ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর চেন্নাই সুপার কিংস শিবির অপার বিস্ময়ে দেখেছিল যে, গৌতম গম্ভীর বা জাক কালিসের মতো কোনও বড় নাম নয়, তাদের ডেরায় এসে বাজিমাত করে বেরিয়ে গেল এক অখ্যাত নাম।
মনবিন্দর বিসলা। সিএসকের ১৯০ রান তাড়া করতে নেমে ২ বল বাকি থাকতে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতেছিল কেকেআর। আর ৪৮ বলে ঝোড়ো ৮৯ রান করে সেই জয়ের ইমারত সাজিয়ে দিয়েছিলেন বিসলা। রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত। আপামর নাইট সমর্থকদের নয়নের মণি।
শুক্রবার ফের এক কেকেআর-সিএসকে ফাইনালের আগে গুরগাঁও থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে বিসলা বললেন, 'কেকেআর যেরকম ক্রিকেট খেলছে, যতটা আবেগ নিয়ে খেলছে, দেখে ভাল লাগছে। ছন্দ পেয়ে গিয়েছে নাইটরা। সিএসকে ও কেকেআর, দুই দলই আইপিএলে সফল। ফাইনালে ভাল লড়াই হবে।' যোগ করলেন, '২০১২ সালে কেকেআরের প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল। ছেলেরা সকলে পরিশ্রম করে ফাইনালে উঠেছিল আর প্রথমবার ট্রফি জয়ের হাতছানি সকলকে তাতিয়ে দিয়েছিল। এমনিতেই চেন্নাই ভীষণ শক্তিশালী দল আর এরকম দলের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটা বেরিয়ে আসে। বাড়তি দশ শতাংশ দিতে ইচ্ছে করে। চেন্নাইকে দেখলে তেতে যায় নাইটরা।'
২০১২ থেকে ২০২১, মাঝে ৯ বছর কেটে গিয়েছে। দুই দলও অনেক পাল্টে গিয়েছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ কমেনি। বিসলা বলছেন, 'কেকেআরের ক্যাপ্টেন পাল্টে গিয়েছে। চেন্নাইয়ের অবশ্য অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও সুরেশ রায়না-রবীন্দ্র জাডেজার মতো সিনিয়র ক্রিকেটারেরা এখনও রয়েছে। তবে দুই দলই বেশ শক্তিশালী।'
ধোনি কি এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন? বিসলা বলছেন, 'ধোনি স্পেশ্যাল প্লেয়ার। স্পেশ্য়াল ক্যাপ্টেন। ভারতীয় দল হোক বা সিএসকে, দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছে। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে অন্যতম ধারাবাহিক দল সিএসকে। অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিল ওদের নিয়ে। কিন্তু সকলকে ভুল প্রমাণ করেছে সিএসকে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে রান পাচ্ছিল না ধোনি। হতে পারে ক্রিকেট থেকে কিছুদিন দূরে ছিল বলে ছন্দ পায়নি শুরুর দিকে। কিন্তু আগের ম্যাচে প্রবল চাপের মুখে দলকে জিতিয়েছে, ফাইনালে তুলেছে। কে বলতে পারে সেদিন চেন্নাই হেরে গেলে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারও হেরে যেত না! বা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার হেরে ট্রফির দৌড় থেকেই ছিটকে যেত না! দিল্লি ক্যাপিটালসকে তো দেখলাম। ওদের মতো হতেই পারত। ফাইনালেও ধোনি ফ্যাক্টর। কলকাতার সমর্থকেরা চাইবেন না ধোনি বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকুক।'
আরও পড়ুন: ৭ বছর পর ফাইনালে কেকেআর, মেন্টরের ভূমিকায় দেখা নেই উদ্বিগ্ন শাহরুখের
২০১২ সালের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৯০ রান তুলেছিল সিএসকে। জবাবে ২ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছিল কেকেআর। বিসলা বলছেন, 'ফাইনালে ১৯০ রান তাড়া করেছিলাম, চেন্নাইয়ের সেই উইকেটটা খুব ভাল ছিল। শারজায় মন্থর উইকেট। সব দলই হোঁচট খেয়েছে। কেকেআর রান তাড়া করার সুযোগ পেয়েছে। কেকেআরের বোলিং ভাল বলে প্রতিপক্ষকে অল্প রানে বেঁধে ফেলতে পারছে। আর তাই রান তাড়া করে দিচ্ছে। তবে অনেক দলই চায় শুরুতে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে বড় রান তুলতে।' যোগ করছেন, '৯ বছর আগের সেই ফাইনালে ইতিবাচক হয়ে নেমেছিলাম। পাওয়ার প্লে-র প্রথম ৬ ওভার বড় রান তুলে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল। নতুন বলে যতটা বেশি সম্ভব রান তুলে নিতে চেয়েছিলাম। গৌতম গম্ভীর সেবার খুব আগ্রাসী ব্যাটিং করছিল। ওকে দেখেই ইতিবাচক থেকে ক্রিজে গিয়েছিলাম। ঠিক করেছিলাম নিজের শট খেলব ও বোলারদের চাপে রাখব।'
বেঙ্কটেশ আইয়ারকে দেখে মুগ্ধ বিসলা। বলছেন, 'গোটা দেশকে প্রভাবিত করে ফেলেছে আইয়ার। আবেগ নিয়ে ক্রিকেট খেলছে। আইপিএলের প্রথম পর্বে পাওয়ার প্লে-তে কেকেআরের বড় রান উঠছিল না। বেঙ্কটেশ আইয়ার আসায় আর শুভমন গিলের সঙ্গে ওর ওপেনিং জুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বাকি ব্যাটাররা স্বস্তি পাচ্ছে। অন্তত সকলে এটা ভাবতে পারছে যে, ক্রিজে গিয়ে বাড়তি দু-একটা বল থিতু হওয়ার জন্য নিতে পারবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও রয়েছে আইয়ার। ফাইনালেও ওর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।'
ফাইনালের আগে কী পরামর্শ দেবেন নাইট শিবিরকে? বিসলা বলছেন, 'ওরা যা ক্রিকেট খেলছে তাতে পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই। এই কেকেআর দলের সকলে ফর্মে। দলের সেরা ম্যাচ উইনার আন্দ্রে রাসেল। শেষ কয়েকটা ম্যাচে রাসেল খেলতে পারেনি। কিন্তু ওর অভাবও বুঝতে দিচ্ছে না কেউ। এক ঝাঁক ম্যাচ উইনার। লকি ফার্গুসন, শিবম মাভি, বরুণ চক্রবর্তী, সুনীল নারাইন, বোলাররা সকলে ছন্দে। আইয়ার-গিল ছাড়াও রাহুল ত্রিপাঠি, নীতিশ রানারা ফর্মে। নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেললেই হবে।'