Diet & Depression : ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে মেজাজ তিরিক্ষে? আসছে ডিপ্রেশন? রইল সলিউশন
Strict Diet & Depression : প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস থাকে, তার শরীরও তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তা না পেলে, শরীরও কোথাও যেন অ্যালার্ম দেয়। ঠিক যেমন নেশা ছাড়ার পর উইথড্রয়াল সিম্পটম আসে।
- ' না, না লুচি খাওয়া যাবে না। এত তেল , তোমার খাওয়া বারণ না ? '
- ' চায়ের সঙ্গে এতগুলি বিস্কুট ! কত ময়দা থাকে জানো? '
- ' পেস্ট্রি ! সর্বনাশ ! হাই ক্যালরি তো। '
- 'ভাত খেয়ো না। আলুটা বাদ দাও। তোমার সুগার না ?'
খাওয়া - দাওয়া করতে গেলেই এমন সাত-সতেরো বাধা আসতেই থাকে। কারও মিশন ওয়েট-লস (weight liss)। কারও আবার চ্যালেঞ্জ সুগার লেভেলটাকে বেঁধে রাখা। আর সবকিছুরই পয়লা শর্ত সেই খাওয়ার সঙ্গেই যুক্ত। এতেই পড়ছেন ভোজনরসিকরা মুশকিলে। একে তো শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মনে থিটমিট, আবার ওজন কমানোর মিশন অ্যাচিভ করার মানসিক লড়াই। তার উপর প্রিয় খাবারগুলিকে যখন একেক কে প্লেট থেকে সরিয়ে দিতে হয়, তখনই লাগে ধাক্কা। সেটা যতটা না জিভে, তার থেকেও বেশি মনে। ডায়েট কন্ট্রোল (Diet Control) করতে গিয়ে মানসিক কষ্টে (Mental Stress) ভুগতে শুরু করেন অনেকে। আর এখান থেকেই শুরু হয় আরেক বিপত্তি। কারণ ডিপ্রেশন (Depression) হলে আবার বেশি মিষ্টি জাতীয় জিনিস খাওয়ার দিকে মানুষের মন যায়। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এই সমস্যটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন মনোবিদ সৃষ্টি সাহা (clinical psychologist ) ও পুষ্টিবিদ মালবিকা দত্ত (Dept head of B.M.Birla Heart Research Centre)।
পুষ্টিবিদ মালবিকা দত্ত জানালেন -
- কোনও ভোজনরসিক মানুষের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে চরম কড়াকড়ি করলে, সে আর ডায়েটচার্ট মানবেই না। তাই চেষ্টা করি, আস্তে আস্তে ক্যালরি কাটডাউন করতে।
- যে খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে, সেই খাবার কেন খাওয়া উচিত নয়, সেটা রোগীকে বোঝানো প্রয়োজন।
- কারও যদি মিষ্টির প্রতি খুবই ভালবাসা থাকে, তাহলে তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকি, রসের মিষ্টির বদলে সন্দেশ খেতে, যখন খুবই ইচ্ছে করবে।
- রাতে খাওয়ার পর যার মিষ্টিমুখ না করলে চলে না, সে সন্দেশ একটা খেতে পারে, একটা রুটি কমিয়ে ।
- তবে রাতের দিকে যত কম ক্যালরি ইনটেক হয়, ততই ভাল। তাই মিষ্টি খেতেই হলে, সকালের দিকে খাওয়া ভাল। তাতে ক্যালরি বার্নআউট হওয়ার সুযোগ থাকে।
- সারাদিনে ১৫-২০ মিনিট ব্রিস্ক ওয়াক করা আবশ্যক। প্রথমেই ডায়েটের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরকম ওয়ার্কআউটের পরামর্শ দিলে সেটা রোগীর কাছে বোঝা মনে হতে পারে।
- আস্তে আস্তে নিয়ম কঠিন হলে মানুষ সংযমের দিকে এগোন ।
- সপ্তাহে ১ দিন ছাড়ের দিন দেওয়া হয়ে হয়ে থাকে, যাতে করে নিয়ন্ত্রিত ডায়েটে থাকা মানুষটির কাছে একদিন খুশি মনে খাওয়ার অবকাশ থাকে। এতে করে মন ভাল থাকে। হঠাৎ অবসাদ আসবে না।
আরও পড়ুন :বুকের ঠিক কোনখানে ব্যথা হলে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাকের সিগন্যাল? আর কোথায় যন্ত্রণা আশঙ্কাজনক?
এই বিষয়ে মনোবিদ সৃষ্টি সাহা জানালেন,
- ডায়েট করতে গিয়ে মানসিক চাপের ঘটনা যাঁরা অসুখ-বিসুখের জন্য বাধ্য হয়ে খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ রাখছে, তাদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। তাদের মনে হতে থাকে, আমার সঙ্গেই বা এটা কেন হতে হল ? অসুখের জন্য মন খারাপ, তার উপর আবার ডায়েটিংয়ের জন্য কষ্ট। তাতে করে সারাদিন মাথার মধ্যে খাবার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভাবনা জাগে।
- প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস থাকে, তার শরীরও তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এবার যখন তারা সেটা পায় না, তাতে শরীরও কোথাও যেন অ্যালার্ম দেয়। ঠিক যেমন নেশা ছাড়ার পর উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখি, ঠিক তেমনটাই হয় ডায়েটিং শুরু করার পরপর।
- অন্য কোনও কাজে ফোকাস করা যায় না। উপরন্তু অন্য কোনও জিনিসও তেমন আনন্দ দেয় না। এটা শুধু মনের ব্যাপার নয়। শরীর যা পেয়ে অভ্যস্ত , তা না পেলে শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়াও হয়। তা অবসাদ ডেকে আনে।
- বায়োলজিক্যালি দেখলে, শরীর যখন চাহিদা মতো সব খাবার পায় না, তখন শরীরের কেমিক্যালগুলি প্রয়োজনের থেকে অনেকটা কমে যায়।
- তার উপর ডায়েট ফলো করতে না পারাটাকেও অনেকেই নিজের ব্যর্থতা হিসেবে ধরে নেয়। তাতে অবসাদ আসেই।
- এছাড়া হঠাৎ খাবার কমিয়ে দিলে শরীরে দুর্বলতা, খিদে , মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এতে মন মেজাজ খিটখটে হয়ে যায়।
- অনেকে ডায়েট ভাঙার ভয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ডাইন-আউট বা নিমন্ত্রণ বাড়িও যান না। তাতেও মনের উপর চাপ বাড়ে ।
আরও পড়ুন :
জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নয় ! শীতে কচিকাঁচাকে সুস্থ রাখতে মানতেই হবে এই নিয়মগুলি
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে - - তাদের সামনে খাওয়া নিয়ে আলোচনা করবেন না।
- যিনি কোনও একটি নির্দিষ্ট ওজনে পৌঁছতে চান, তাঁরা সামনে একটি পোশাক রাখবেন টার্গেট হিসেবে। তাহলে যখনই বেশি খেতে ইচ্ছে করবে, তখনই ওই ছোট মাপের পোশাকটির কথা মনে করতে হবে। তাহলে মন এমনিই শান্ত হবে।
- কোনও অসুখের কারণে ডায়েট কন্ট্রোল করতে গেলে, সামনে প্রেসক্রিপশন রাখুন বা ব্লাড সুগার লেভেল টার্গেট রাখুন উদাহরণ স্বরূপ। আপনার শরীরের যে প্যারামিটারটিকে কন্ট্রোলে রাখতে চাইছেন, সেই নির্দিষ্ট মাত্রাটি মনে রাখুন সর্বদা।
- বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার জায়গা না বেছে, অন্য কোথাও বাছুন।
- কিছু লোভনীয় খাবার কম ক্যালরিতে কীভাবে রাঁধা যায়, রেসিপি জেনে রাখুন। প্রয়োজনে নিজের পছন্দের খাবার সেইভাবে রেঁধে খান।
- ইন্টারনেট দেখে এক্সট্রিম ডায়েট প্ল্যান নেবেন না।
- কাছের মানুষদেরও চেষ্টা করতে হবে, যাতে তাঁদের মনটা ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।
এইভাবে এগোতে পারলে হয়ত মনকে কষ্ট না দিয়েই ডায়েট গোল অ্যাচিভ করা যাবে। মনোবিদের মতে, যে কোনও খিদে বা ইচ্ছে ৩০-৪ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। এই নির্দিষ্ট সময়টা নিজের মনটাকে সরিয়ে রাখতে হবে।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )