Uttarakhand Tunnel Rescue Timeline: প্রকৃতির সামনে বার বার ব্যর্থ প্রযুক্তি, মানুষের হাতেই এল সাফল্য, উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আলো ফুটল যেভাবে...
Uttarakhand Tunnel Collapse: পেটের খাবার জোগাড় করতে ভিন্ রাজ্যে ঠিকে শ্রমিকের কাজ করতে যান বহু মানুষই। সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গ নির্মাণের ক্ষেত্রও তার অন্যথা হয়নি।
দেহরাদূণ: ভোররাতে নির্মীয়মান সুড়ঙ্গ ভেঙে পড়ে বিপত্তি। তার পর পদে পদে ধাক্কা। কখনও উদ্ধারকার্য চালাতে গিয়ে যন্ত্রই বসে গিয়েছে মাটিতে। কখনও আবার ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে ড্রিল মেশিন। শেষ পর্যন্ত মানুষ হাত লাগাতেই মিলল সাফল্য। ১৭ দিনের মাথায় উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে বেরোলেন আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক। (Uttarakhand Tunnel Collapse)
পেটের খাবার জোগাড় করতে ভিন্ রাজ্যে ঠিকে শ্রমিকের কাজ করতে যান বহু মানুষই। সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গ নির্মাণের ক্ষেত্রও তার অন্যথা হয়নি। আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে উত্তরাখণ্ডের স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন মাত্র দু’জন। বাকিরা বাংলা-সহ অন্য রাজ্য থেকে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের চারধাম প্রকল্পের আওতায় ওই সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলাকালীন বিপত্তি বাঁধে। কী থেকে বিপত্তি, কোন পথে উদ্ধারকার্যে মিলল সাফল্য, দেখে নিন পর পর ঘটনাক্রম। (Uttarakhand Tunnel Rescue Timeline)
১২ নভেম্বর: ১২ নভেম্বর দীপাবলি উপলক্ষে গোটা দেশ যখন আলোর উৎসবে মাতোয়ারা, সেই সময় ভোর ৫টা বেজে ৩০ মিনিট নাগাদ সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গের প্রবেশ পথ থেকে ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। খবর পেয়ে উদ্ধারকার্যে হাত লাগায় উত্তরকাশী জেলা প্রশাসন।
১৩ নভেম্বর: অক্সিজেন সরবরাহের পাইপ ব্যবহার করে শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ভিতরে তাঁরা বেঁচেবর্তে রয়েছেন বলে জানতে পারেন উদ্ধারকারীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি। কিন্তু তখনও উপর থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ছিল প্রতি মুহূর্তে। উদ্ধারকার্য চালানো দুষ্কর হয়ে ওঠে।
১৪ নভেম্বর: স্টিলের পাইপ আনা হয় ঘটনাস্থলে। তার মধ্যে দিয়ে খাবার, অক্সিজেন, আলো এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয় ভিতরে। পাইপে মুখ দিয়ে শ্রমিকরা জানান, অসুস্থ বোধ করছেন তাঁরা।
১৫ নভেম্বর: ড্রিল মেশিন দিয়ে খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু তাতে কাজ এগোয়নি। ফলে আমেরিকায় তৈরি বিদেশি অগার মেশিন চেয়ে পাঠানো হয়। ওই অগার মেশিন বসানোর জন্য গড়ে তোলা হয় আস্ত একটি প্ল্যাটফর্মও। কিন্তু সেই কাজ চলাকালীনই ধস নামে। তাতে ওই প্ল্যাটফর্মও ভেঙে যায়। আবারও সেটি তৈরি করা হয়।
১৬ নভেম্বর: বিদেশ থেকে ড্রিল মেশিন এসে পৌঁছয়। সবকিছু জুড়ে প্ল্যাটফর্মের উপর বসানো হয় সেটিকে। মধ্যরাতের পর খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়।
১৭ নভেম্বর: বিদেশি অগার মেশিন দিয়ে ২৪ মিটার ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে ফেলা সম্ভব হয়। সুড়ঙ্গের মধ্যে চারটি পাইপ ঢোকানো হয়। পঞ্চম পাইপটি ঢোকানো সময় পাথরে ধাক্কা লেগে ফের কাজে বিঘ্ন ঘটে। ইন্দৌর থেকে আরও একটি অগার মেশিন আনা হয়। কিন্তু মাটি খুঁড়তে গেলে প্রচণ্ড শব্দে সুড়ঙ্গের ছাদ কেঁপে ওঠে এবং ফাটল ধরে। তড়িঘড়ি কাজ বন্ধ করে দিতে হয়।
১৮ নভেম্বর: খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জানান, খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মাটি কেঁপে উঠছে। তাতে আরও চাঙড় ভেঙে পড়ে মারাত্মক বিপদ ঘটে যেতে পারে। পরিবর্তে পাঁচটি বিকল্প পরিকল্পনা তুলবে ধরা হয়, যার মধ্যে পাহাড়ের উপর দিয়ে উল্লম্ব ভাবে গর্ত খোঁড়ার পরিকল্পনাও ছিল।
১৯ নভেম্বর: খোঁড়াখুঁড়ি এদিনও বন্ধ রাখা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রি নিতিন গডকড়ী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। উদ্ধারকার্য খতিয়ে দেখেন। পাহাড়ের উপর দিয়ে গর্ত খোঁড়াই ঠিক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। দুই থেকে আড়াই দিনের মধ্যে উদ্ধারকার্য সম্পন্ন হবে বলে জানান।
২০ নভেম্বর: উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্ধারকার্যের খোঁজ নেন। এর পর সুড়ঙ্গের অন্দরে ছয় ইঞ্চি চওড়া পাইপলাইন বসিয়ে, তার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের খাবার, এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়।
২১ নভেম্বর: পাইপের মধ্যে দিয়ে আলো এবং ক্যামেরা ঢোকানো হয়। তাতে প্রথম বার দর্শন মেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের। স্বস্তি পান পরিবার-পরিজনা। এর পর বালকোটের দিক, সুড়ঙ্গের পিছন দিক থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গের শেষ দিকে, পাহাড়ের উপর উল্লম্ব ভাবে গর্ত খোঁড়া শুরু হয়ে যায়।
২২ নভেম্বর: উল্লম্ব গর্ত দিয়ে ৪৫ মিটার পর্যন্ত একটি পাইপ ঢোকানো হয়। কিন্তু ১২ মিটার বাকি থআকতে ফের কাজে বাধা আসে। রডে ঢা্কা খায় অগার মেশিন।
২৩ নভেম্বর: সুড়ঙ্গের ভিতর থাকা লোহার রডে সরিয়ে ফের শুরু হয় খোঁড়ার কাজ। কিন্তু এবার ফাটল ধরে অগার মেশিন বসানো প্ল্যাটফর্মেই। তড়িঘড়ি বন্ধ করতে হয় উদ্ধারকার্য।
২৪ নভেম্বর: অগার মেশিনের ব্লেড এবং হাতল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটিতে গেঁথে যায় ব্লেড। ভেঙে যায় হাতল।
২৫ নভেম্বর: শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে BSNL-এর তরফে সংযোগ গড়ে তোলা হয়, যাতে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের লোকজন কথা বলতে পারেন। ল্যান্ডলাইন সংযোগও বসে।
২৬ নভেম্বর: প্লাজমা কাটার এনে ক্ষতিগ্রস্ত অগার মেশিনটি তোলার কাজ শুরু হয়, যাতে যন্ত্র ছাড়া, হাত লাগিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন উদ্ধারকারীরা। পাশাপাশি চলতে থাকে উল্লম্ব ভাবে গর্ত খোঁড়ার কাজও। ধ্বংসস্তূপের ভিতর আরও একটি পাইপ ঢোকানো সম্ভব হয়। এয়ার কমপ্রেস্ড পাইপের মধ্যে দিয়ে অক্সিজেন, বিদ্যুৎ এবং জিনিসপত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। NDRF, SDRF, BRO, চারধাম প্রজেক্ট সংস্থা NHIDCL এবং ITBP উদ্ধাকার্যে হাত লাগায়।
২৭ নভেম্বর: ঘটনাস্থলে পৌঁছন 'ব়্যাট হোল মাইনিং' বিশেষজ্ঞরা। কয়লা খনিতে সঙ্কীর্ণ গর্ত খুঁড়ে যেভাবে কয়লা তোলা হয়, যা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল, সেই পদ্ধতিতেই শুরু হয় উদ্ধারকার্য। হাত দিয়ে শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার কাজ।
২৮ নভেম্বর: পেশিশক্তি প্রয়োগ করেই আলোর দেখা পান উদ্ধারকারীরা। ৫২ মিটার পর্যন্ত পাইপ ঢোকানো সম্ভব হয়। শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যান উদ্ধারকারীরা। বাইরে মোতায়েন করা হয় অ্যাম্বুল্যান্স, হেলিকপ্টার। অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রও গড়ে তোলা হয়। রাত ৮টা বাজার কিছু ক্ষণ আগে প্রথমে দু'জনকে বের করে আনা হয়। তার পর একে একে বের করে আনা হয় বাকিদেরও। মালা পরিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান ধামি।